নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ধর্মীয় অনুভূতি নয় মাজার ভাঙার নেপথ্যে স্বার্থবাদী মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন তিনি।
ধর্মীয় অনুভূতি ও চর্চার সাথে সম্পকির্ত ‘মাজার’ ভাঙা বন্ধে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতাদের নিয়ে এই সভার আয়োজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক।
এই সময় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এতোদিন মাজারগুলোর কমিটির মধ্যে যাদের নিযুক্ত করা হয়েছে তারা দলীয় ছিল। এসব মাজার অধিকাংশই ব্যবসাভিত্তিক। বিভিন্নভাবে সেখানে ব্যবসা করা হয়। আর্থিক বিষয় এখানে যুক্ত। সে কারণে স্বৈরাচারী সরকার পতনের পরে যে অবস্থা এখন হচ্ছে সেটা ওলামায়ে ক্বেরাম বা মুসলিম জনগোষ্ঠীর পক্ষ থেকে হচ্ছে বলে মনে হয় না। এটা একান্ত ওই এলাকার স্বার্থবাদী মানুষের স্বার্থের দ্বন্দ্ব।’ এই বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
গিয়াস বলেন, ‘মাজার কমিটিগুলোতে কারা আছেন, তারা ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মানে কিনা, শিরকমুক্ত কিনা। এলাকার মানুষ মাজারের কার্যক্রম পছন্দ করে কিনা ওলামায়ে ক্বেরাম পছন্দ করে কিনা, এসব খতিয়ে দেখা অত্যন্ত জরুরি। অর্থনৈতিক কারণে সন্ত্রাসী, স্বৈরশাসকের সময়ে যারা কমিটিতে ছিল তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে গিয়ে হামলা, ভাঙচুর হচ্ছে। এসব যারা প্রতিহত করবে তাদের মনেও অনেক ক্ষোভ আছে।’
পরিস্থিতি মোকাবেলায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে শক্তভাবে দাঁড়াতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘হামলা বা কোনো ঘটনা ঘটলে সেখানে প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে প্রশাসনকে। আমরা বলছি, আইনকে কেউ হাতে তুলে নিবেন না। অপরাধীকে আইনের হাতে সোপর্দ করুন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি বলিষ্ঠভাবে দাঁড়িয়ে প্রতিকার করতে না পারে তাহলে সাহস বেড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করে আন্দোলন করে এই অবস্থায় এসেছি। আমরা এ দেশের মঙ্গল চাই। সেজন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। এটা আমাদের দায়িত্ব। তবে প্রশাসন থেকেও আমাদের পাওয়ার আছে। অভিযোগ দেয়ার পরও যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা না যায়, তাহলে অনেকে উৎসাহ পাবে। অনেক জায়গায় এমন হয়েছে, মাজারের পরিবর্তে দানবাক্স ভেঙ্গে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। তারা আসলে মাজার ভাঙ্গতে নয় অর্থনৈতিক কারণে এই কাজটা করেছে। এগুলো প্রশাসনকে দেখতে হবে।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বি, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান, জামায়াতে ইসলামের জেলা কমিটির আমীর (সভাপতি) মমিনুল হক, মহানগর কমিটির আমীর আব্দুল জব্বার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহানগর কমিটির সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, হেফাজতে ইসলামের মহানগর কমিটির সভাপতি ফেরদাউসুর রহমান প্রমুখ।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন মাজারে হামলা হচ্ছে। কিছু জায়গায় ভাঙচুর করা হয়েছে, সারাদেশেই ঘটছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমি সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা চাই।’