পুড়ে যাওয়া গাজী টায়ার কারখানায় মিললো মানুষের হাড়-খুলি

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে গাজী টায়ারস কারখানায় আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ছয়তলা ভবনটিতে ঢুকে হতাহতদের মাথার খুলি, হাড়গোড় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। ভবনটিতে পাওয়া মানুষের এসব দেহাবশেষ পরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন তারা।

রোববার বিকেলে আগুনের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গণশুনানি শেষে কারখানাটির ভেতরে ঢুকে পড়েন নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা। তাদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান। সেখানে তারা মেঝেতে পুড়ে যাওয়া বেশকিছু হাড় ও মাথার খুলি পান।

গত ২৫ আগস্ট দিনভর লুটপাটের পর রাতে কারখানাটিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন উপজেলার মৈকুলী গ্রামের বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি শাহাদাত হোসেন। ভাইয়ের দেহাবশেষের খোঁজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্যদের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির তৃতীয় তলা পর্যন্ত উঠে যান সিনথিয়া। সেখানে একটি মানুষের মাথার খুলি পান তিনি। যার অধিকাংশই পুড়ে গেছে।
“সবার সাথে আমিও ফ্যাক্টরিতে ঢুইকা যাই। তিনতলায় হাড়গোড় দেখছি অনেক। অনেকেই হাতে নিয়া গেছে। আমিও একটা খুলি নিয়া আসছি”, বলেন সিনথিয়া।
যদিও পরে অন্যদের মতো এই খুলিটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন সিনথিয়া।

এর আগে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি কারখানার চত্বরে একটি গণশুনানির আয়োজন করে। সকাল দশটা থেকে দুপুর তিনটা পর্যন্ত চলে গণশুনানি। এই সময় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের সাথে কথা বলেন তদন্ত কমিটির লোকজন। তাদের কাছ থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য লিপিবদ্ধ করেন। গণশুনানিতে ৭৮টি পরিবার অংশগ্রহণ করেন বলে জানান কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হামিদুর রহমান। আমরা যখন গণশুনানি শেষে উপজেলা পরিষদে গিয়ে বসি তখন জানতে পারি স্বজনরা ভবনটির ভেতরে ঢুকে পড়েছে এবং সেখানে মানুষের কিছু হাড়গোড় পেয়েছে। পরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাদের নির্দেশনা দেন। পরে আমরা এসব দেহাবশেষ সংগ্রহ করার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেই। স্বজনরা খুঁজে পাওয়া দেহাবশেষ জমা দিয়েছেন। প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে এসব দেহাবশেষ শনাক্তের প্রক্রিয়ায় যাওয়া হবে”, বলেন হামিদুর।

এদিকে, বেলা সাড়ে বারোটার দিকে গণশুনানি চলাকালে স্বজনদের একটি অংশ ক্ষুব্দ হয়ে সামনের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় ১০ মিনিট পর তদন্ত কমিটির সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী স্বজনদের নিভৃত করে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক করেন। মহাসড়কে বসা থাকা অবস্থায় নিখোঁজ ব্যাটারি কারখানার শ্রমিক আমান উল্লাহ’র বৃদ্ধা মা রাশিদা বেগম বলেন, দিনের পর দিন যাইতাছে অথচ কেউ কইতাছে না আমার পোলা কই আছে। এতো এতো লোক এনে আইতাছে কেউ লাশের কোন খোঁজ জানাইতে পারতাছে না। আগুনে পুইড়া গেলে হাড্ডিগুড্ডি অইলেও দিতে অইব। লাশ না পাইলে আমরা কারখানার সামনে থেইকা যামু না।

আগুনের ঘটনার ৫ দিন পর গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ছয়তলা ভবনটির আগুন সম্পূর্ণ নেভানো সম্ভব হলে অগ্নিনির্বাপন কার্যক্রম শেষ করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স।
তখন নারায়ণগঞ্জ জোন-২ এর উপসহকারী পরিচালক আব্দুল মন্নান জানান, টানা আগুনের কারনে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। তবে, ভবনের বেজমেন্টে তল্লাশি চালানো হয়েছে, ড্রোন ও টিটিএলের (উঁচু মই) মাধ্যমে ভবনটির ভেতরেও পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে কিন্তু কোনো ভিক্টিম বা তাদের দেহাবশেষ মেলেনি।

add-content

আরও খবর

পঠিত