চাঁদাবাজি অভ্যূত্থান স্পিরিটের সাথে যায় না: সারজিস আলম

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : তরুণ প্রজন্ম বৈষম্যহীন সুন্দর একটি বাংলাদেশ চায়ন বলে মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় পরিষদের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আবারও যদি প্রয়োজন হয় আমরা রাজপথে নামবো, স্লোগান দেবো, জীবন বাজি রাখবো। প্রয়োজন হলে আবারও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতো যেকোনো ফ্যাসিস্টকে রাজপথে থেকে দেশছাড়া করবো। প্রয়োজন হলে চব্বিশের মতো আরও গণঅভ্যূত্থান ঘটাবো।’

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে এক সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন।

সারজিস বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা অসংখ্যা মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, হাসিনার দোসররা অসংখ্য মানুষকে অন্যায়ভাবে জেলখানায় রেখেছিল, ডিবি অফিসে পাঠিয়েছিল, বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করেছে। আজকেও যদি কিছু মানুষ অন্য কোনো রূপে এইগুলো করে তাহলে তাও আমরা সমর্থন করি না।

তরুণ সমাজকে সুশিক্ষিত, মেধাবী ও দক্ষ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অসংখ্য কাজ থাকতে পারে কিন্তু আমাদের প্রধান কাজ পড়াশোনা করে নিজেকে সুশিক্ষিত, মেধাবী ও দক্ষ হিসেবে তৈরি করা। যখন ক্লাস চলবে তখন ক্লাসে যাবেন, আবার খেলার সময় খেলার মাঠে থাকবেন। আপনরা যোগ্যতা ও দক্ষতার অপব্যবহার যে করবে তার উদ্দেশ্য কখনই ভালো হতে পারে না। আপনি কারও লাঠিয়াল বাহিনী হবেন না। আপনারা নিজের মেধা, শিক্ষা, দক্ষতায় এমনভাবে নিজেকে গড়ে তুলে সাবলম্বী হয়ে উঠবেন, কোনো ভাইয়ের উপর ভর করে নয়। এই ছাত্র-জনতার হাতে ভবিষ্যত বাংলাদেশ দেখতে চাই। যারা আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তারা আজ থেকে ২০ বছর পরে একেকজন সংসদের এমপি, মন্ত্রী হবেন, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই নারায়ণগঞ্জে অল্প কিছু মানুষ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে জিম্মি করে বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালিত করেছে। এই নারায়ণগঞ্জে ফুটপাত থেকে শুরু করে গার্মেন্টস কিংবা মার্কেট থেকে শুরু করে অটোস্ট্যান্ডে যে চাঁদাবাজি চলে তা ছাত্ররা কোনোভাবে সমর্থন করে না। আমাদের এই অভ্যূত্থানের যে স্পিরিট তার সাথে এইটা যায় না।’

সারজিস বলেন, ‘ছাত্র-জনতার উপর যারা হামলা করেছে, তারা হোক পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ কিংবা হাসিনার দোসর; তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তি হবে না। যে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর নির্মমভাবে গুলি চালিয়েছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

‘বাংলাদেশের প্রতিটি জায়গায় ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। সংসদের পলিসি মেকিং এবং ডিসিশন মেকিংয়ে আপনাদের দেখতে চাই। কারণ দিনশেষে আপনি কি খাবেন, কি পরবেন, কীভাবে চলবেন, কীভাবে গার্মেন্টস চলবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলবে তা সবকিছু নির্ধারিত হয় ওই সংসদ থেকে। আজকের পর থেকে বাবা-মাকে বলবেন, আমি শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার না হওয়ার স্বপ্্ন আজকে থেকে দেখবো না, আমি একজন সুশিক্ষিত, দক্ষ, সৎ রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠারও স্বপ্ন দেখতে চাই’, যোগ করেন তিনি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক বলেন, ‘কোনো অপশক্তিকে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের স্পিরিটকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কোনো কাজ কখনই করতে দেবেন না। চব্বিশের স্পিরিটকে সামনে রেখে নতুন একটি পলিটিক্যাল ডিমান্ড নিয়ে আগামীর বাংলাদেশ যেখানে যাবে সেই বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে থাকবে নারায়ণগড়ঞ্জের এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের ছাত্র-জনতা।’

এই সময় আরও বক্তব্য রাখেন সমন্বয়ক পরিষদের নেতা আব্দুল্লাহ সালেহীন অয়ন, সামিয়া মাসুদ মম, ইসমাঈল হোসেন রুদ্র, মুবাশ্বিরুজ্জামান মৃধা।
এর আগে সারজিস ও অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা নারায়ণগঞ্জে আন্দোলন চলাকালীন হতাহত স্বজনদের সাথে কথা বলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাদের সাথেও মতবিনিময় করেন তারা।

সমাবেশ চলাকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সেখানে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন ছিল।

add-content

আরও খবর

পঠিত