নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( বিশেষ প্রতিনিধি ) : তরুণ সাংবাদিক ও সংগঠক শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র। বাবা-মায়ের একমাত্র আদরের বড় ছেলে। শত চ্যালেঞ্জিং হলেও পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিল সাংবাদিকতা। সে সরকারী তোলারাম কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। বাবা-মায়ের বড় ছেলে হওয়ার সুবাধে দায়িত্ববোধটা সেই ছোট থেকেই। তাই বাড়তি খরচতো দূরের কথা। যতটা পারতো টাকা সাশ্রয় করে চলতো। পাশাপাশি টিউশনি করে সে তার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে বাবাকে সহযোগীতা করতো।
আজ ৮ সেপ্টম্বর। দেখতে দেখতে যেন চলে গেল ৪টি বছর। ২০১৭ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাতে ফতুল্লার লালপুরের বাসা থেকে কাউকে কিছু না বলে বের হয় শাহরিয়াজ মাহমুদ শুভ্র। পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ভুঁইগড়ের একটি ডোবা থেকে অজ্ঞাত এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ১০ সেপ্টেম্বর জামা কাপড় দেখে লাশটি শাহরিয়াজের বলে শনাক্ত করে তার বাবা মা।
এখনো শুভ্রর স্মৃতিতে দিন-রাত কান্নায় বুক ভাসায় তার বাবা-মা। আদরের ছোট ভাই শাফিনও ভাইকে খোঁজে। ছোট্ট বোন ফাহমিদা ভাইয়ের জন্য এখনো যে দিশেহারা। আর কখনো তো আসবেনা ভাইটি, রাখবেনা বোনের কোন আবদার। করবে না আর খুনসুটী। তার সাথে থাকা সহকর্মী, সহপাঠি, বন্ধু-বান্ধবীরাও এখনো মিস করে শুভ্রকে।
জানা গেছে, সেদিন রাতে অনেক দূর থেকে তার প্রিয়বন্ধুটি আসছিল। তবে এতো ভোরে তাকে রাস্তায় নামানো হবে এটাকে অনিরাপদ ভাবছিল শুভ্র। যেহেতু তরুণী বন্ধুটি ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরবেন। তাই বন্ধুর নিরাপত্তার কথা ভেবে সে কাউকে না জানিয়ে ভোরেই বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু সে জানতো না। অন্যের নিরাপত্তার কথা ভেবে চলা শুভ্রই সেদিন ছিল অনিরাপদ। যে কারণে সামান্য কিছু টাকা আর মোবাইল ফোনের জন্য ছিনতাইকারীর হাতে তার মৃত্যু হয়।
দীর্ঘ ৪ বছর ছেলে হারা বাবা-মা, ভাই-বোনগুলো কেমন আছে জানতে কথা হয় শুভ্র’র বাবা কামাল সিদ্দিকীর সাথে, তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আমাদের তো কেউ নাই। শুভ্র হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক খোঁজ খবর নিলেও এখন আর কেউ আসেনা। মধ্যবিত্ত সংসারের বড় হওয়া ছেলেটি নেই। এ কথা রোজই মনে পড়ে। আমি আর আমার স্ত্রী কান্না করি। কোনভাবেই যে ভুলতে পারিনা। আমার ছেলেটি নেই। খুব কষ্টে কোন রকম দিন কাটিয়ে জীবন সংগ্রাম পারি দিচ্ছি।
মামলার বিষয়ে অগ্রগতি ও তাদের কি দাবি জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা আর কিছু চাইনা। আমার ছেলের কোন শত্রু নেই। আমার কোন শত্রুও তাকে হত্যা করেনি। তবে যারা করেছে প্রকৃত দোষীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন হোক। মামলার জন্য আমি এবং স্ত্রী সাক্ষি দিয়েছি। অন্যদের যাদের ঘটনাস্থল থেকে সাক্ষি করা হয়েছে। তারা অনেকেই নেই। কারণ যাদের সাক্ষি দেয়া হয়েছিল তারা কেউ বাঁচার জন্য ভুল মোবাইল নাম্বার দিয়েছে, কেউবা ভুল ঠিকানা দিয়েছে। যেহেতু তাদের রক্তের কোন বন্ধন নেই। তাদের জন্য এটা জরুরীও না। তবে এটুকুই বলবো। বিচার কার্য যেন দ্রুত শেষ হয়। দুইটি কারণে বিচার পিছিয়ে আছে। একটি হলো মহামারী করোনা অপরটি হলো ব্যবস্থাপনা। যেহেতু মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্নুাল-১ রয়েছে। অনেক মামলা। সেক্ষেত্রে সময়ের জন্য মামলাটি দেরী হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, আমি মামলাটি বেশ সময় লড়েছি। আসামী ৪ জন পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে। যাদের মধ্যে দুইজন মারাও গেছে। এদের একজন আলআমিন ও রবিন। এখন করোনাকাল থাকায় একটু সময়ক্ষেপন হয়েছে। তবে আমিও আশাবাদি দ্রুত এর বিচার কাজ শেষ হবে। আর শুভ্র হত্যার সুষ্ঠু বিচার পাবে।
প্রসঙ্গত, ওইসময় শুভ্র হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার ভোরে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার শনির আখড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলো, ইয়ামিন ওরফে আল আমিন, জালাল, জুয়েল ও রবিন। এই সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি সিএনজি অটো রিকশা, দুইটি ছুরি ও চারটি মোবাইল ফোন, শুভ্রর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। শুভ্র হত্যা মামলার চার্জশীট দেয়ার আগেই মামলার আসামী আল আমিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে জেল হাজতে মৃত্যু বরণ করে। পরে আরো একজন মারা যায়।