নারায়ণগঞ্জবার্তা২৪ : নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার দৌলতপুর এলাকার হালিম মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া মৃত ওয়াজ উদ্দিনের ছেলে ইসমাইল হোসেন জীবনে বড় হতে হলে রিস্ক নিতেই হয়। বেশ আগের থেকেই এমন ধারনা জন্মেছিল তার। এক ভিন্ন আঙ্গিকে শুরুটাও হয়েছিল ইসমাইলের কিন্তু রিস্ক নিলেই যে সফল হওয়া যাবে না, সেই বিষয়টা জানতেন না ইসমাইল। তাই জীবনে বড় হতে মাদক কারবারিতে যুক্ত হয় ইসমাইল হোসেন নামে এক যুবক।
এদিকে ইসমাইল হোসেন এর বয়স ৩৫ কিংবা ৩৭ বছর। দুই ছেলে আর এক মেয়ের সংসার। ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৩৫ দিন। আর আজ ২০ই এপ্রিল মঙ্গলবার ভোরে ফতুল্লায় ২৫ কেজি গাঁজাসহ ইসমাইল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনা ফতুল্লা থানার। তবে ফতুল্লা থানা পুলিশ তাঁকে ধরতে চেষ্টা করছে আগে থেকেই। কিন্তু চালাক-চতুর ইসমাইলকে প্রমাণসহ গ্রেফতার করা যাচ্ছিল না তাকে। তার পিছনে একাধিক গোয়েন্দা লাগানো হয়, কখন গাঁজাসহ তাঁকে পাওয়া যায়। আজ ২০ ভোরে খবর আসে যে ওসি ফতুল্লার নিকট। রাতে গাঁজা এসেছে ইসমাইলের বাসায়। দ্রুত এসআই শামীম মিয়াকে ফোর্সসহ পাঠানো হয় ইসমাইলের দৌলতপুর (কুতুবপুর) এলাকার হালিম মিয়ার ভাড়া বাসায়। অভিযান চালায় শামীম। ৩৫ দিনের দুধের শিশুর আতুর ঘর থেকে পাওয়া যায় বস্তা ভর্তি ২৫ কেজি গাঁজা।
ইসমাইলের নিকট থেকে জানা যায় যে, পেশায় একজন গাড়ি চালক ছিল ইসমাইল। সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রাম রুটে লোকাল বাস চালাতো সে। চৌদ্দগ্রাম থেকে মাদক ব্যসায়ী হারুন (ছদ্মনাম) মাঝে মাঝেই গাঁজাসহ তার গাড়িতে অধিক ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতো। সেখান থেকেই পরিচয়। বাসে মাঝে মাঝেই কথা হতো। হারুন সামান্য পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করে অনেক টাকার মালিক হয়েছে। জীবনে বড় কিছু করতে হলে রিস্ক নিতে হয় এ কথা জেনেছিল হারুনের নিকট থেকে। সেই একটি বাক্য খুব মনে ধরেছিল ইসমাইলের। এরপর সুযোগের পালা। সায়েদাবাদ-চট্টগ্রাম গাড়ি চালিয়ে এ ব্যবসা করা যাবে না। তাই বাস চালানোর চাকুরিটা ছেড়ে দেয় ইসমাইল। কিছু জমানো টাকা এবং ধার-দেনা করে একটি সিএনজি বেবিট্যাক্সি কিনে ইসমাইল। শুরুটা এখান থেকেই। পুঁজি তেমন নেই। তাই প্রথমে মাত্র দুই কেজি গাঁজা এনে শুরু করেন ব্যবসা। লাভ চারগুন। জমে ওঠে নতুন ব্যবসা। এরপর ব্যবসার পরিধি বাড়ে। কিন্তু এমন লাভজনক ব্যবসায় যত মূলধন তত লাভ। নিজেকে সংবরণ করতে পারে না ইসমাইল। এবার মূলধন বাড়াতে বিক্রি করে দেয় সিএনজি বেবি ট্যাক্সিটি। বড় চালানে এবার আনতে হবে মাল। হারুনকে ফোন দিয়ে পাঠিয়ে দেয় আগাম টাকা। হারুন ২৫ কেজি গাঁজা এনে পৌঁছে দেয় ইসমাইলকে। আর পুলিশের কাছে পৌঁছে যায় সে খবর। এদিকে ৩৫ দিনের শিশু ছেলে রেখে এবার ২৫ কেজি গাঁজাসহ বাবা জেলে। শিশু বাচ্চাটি হয়তো বুঝবে না তার বাবাকে কেন দেখতে পাচ্ছে না। রিস্ক নিয়ে বড়লোক হওয়ার বাসনা আর থাকবে কিনা ইসমাইলের সেটাও দেখতে অপেক্ষায় থাকতে হবে।
এ বিষয় ফতুল্লা মডেল থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) শামীম আহম্মেদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা থেকে গাঁজা নিয়ে এসে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছিল ইসমাইল। এমন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ভোরে দৌলতপুর এলাকায় তার ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে ইসমাইলের ঘরে থাকা ২৫ কেজি গাজাসহ ইসমাইলকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযান কালে এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও গাঁজা মাপার কাজে ব্যবহৃত একটি ডিজিটাল মিটার (মেশিন) উদ্ধার করা হয়। ইসমাইলের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।