নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশের মধ্য দিয়ে ২নং বাবুরাইলে খানকায়ে দারুল ইশকে সপ্তাহ ব্যাপী উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ওলী হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতি গরীবে নেওয়াজ (রহ:)-এর ৮০১১ তম ওফাত দিবস উপলক্ষ্যে প্রতিবারের মত এবারও ১৪ই ফেব্রুয়ারি রবিবার থেকে ব্যাপক কর্মসূচীর মাধ্যমে ৬৬তম বার্ষিকী ওরশ শুরু হয়েছে।
এবারের ওরশ শরীফের কর্মসূচীর বিশেষত্ব হল এই জনপদের খাজা ভক্তরা সর্বপ্রথম ৬৬ বছর পূর্বে ১৯৫৫ সালে ১ রজব এই স্থানে প্রথম ওরশের আয়োজন করেছিল। উক্ত অনুষ্ঠানে আয়োজক ছিলেন ঢাকার নবাববাড়ীর খানকায়ে দারুল ইশকে পীরে কামেল হযরত শাহ্ সৈয়দ খাজা নাজমুল হাসান নকশেবন্দ আবুল ওলাই (র:)। ওই সময় এই ওরশে আরো যারা সামিল ছিলেন তারা হলেন, হযরত শাহ সৈয়দ খাজা দায়েম নকশেবন্দ আবুল ওলাই (র:), চিশতিয়া তরিকার অন্যতম খলিফা, বাংলাদেশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি পৌর পিতা আলী আহমেদ চুনকা, আলহাজ্ব মুজাফফর আলী কন্ট্রাকটর, আলহাজ্ব মাহতাব উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল গফুর একরামপুরী, নাবালক কন্ট্রাকটরের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
৬৬তম বার্ষিক ওরশ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করবেন ঢাকা নবাববাড়ীর দারুল ইশকে গদীনশীন পীর হযরত শাহ্ সৈয়দ খাঁজা আবুজার হাসান নক্সেবন্দ আবুল ওলাই, হযরত শাহ্ সৈয়দ খাঁজা ওয়াজির হাসান নক্সেবন্দ আবুল ওলাই, হযরত শাহ্ সৈয়দ খাঁজা ওয়াদ হাসান নক্সেবন্দ আবুল ওলাই, হযরত শাহ্ সৈয়দ খাঁজা ত্বাহা হাসান নক্সেবন্দ আবুল ওলাই নকশেবন্দ (রহ:)। প্রতিটি খাজাভক্ত ও আশেকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ উদ্দিপনা পরিলক্ষিত হয়।
অনুষ্ঠানগুলোর রয়েছে : ১ রজ্জব রবিবার বাদ মাগরীব ত্বরিকতের পতাকা উত্তোলন, ১ রজ্জব হইতে ৬ রজ্জব পর্যন্ত প্রতিদিন রাত ৯ টায় কুল, মজলিশে সামা এবং রাত সাড়ে ৯ বাংলা বয়াতী গানের আসর। ৭ রজ্জব সকালে নেওয়াজ বিতরণ ও বাদ আসর মজলিশে সামা ও আখেরী কুল। এই পবিত্র ওরশ মোবারককে সাফল্য মন্ডিত করিয়া তোলার জন্য আপনাদের উপস্থিতি ও সর্বাত্মক সাহায্য ও সহযোগিতা কামনা করি।
বাংলা বয়াতী গানের অনুষ্ঠান সূচী : ১ রজ্জব, ১৪ই ফেব্রুয়ারি রবিবার থেকে ৬ রজ্জব ১৯শে ফেব্রæয়ারি শুক্রবার পর্যন্ত মো. আবুল সরকার বনাম মো. আক্তার দেওয়ান, মো. লাল মিয়া বয়াতী বনাম মো. নূরে আলম সরকার, মো. ফেরদৌস সরকার বনাম মো. শরীফ সরকার, মো. আমির হোসেন বয়াতী বনাম লিটন নগরী, মো. রাজ্জাক দেওয়ান বনাম মো. দিদার চৌধুরী, মো. জালাল দেওয়ান বনাম মো. ফজল সরকার।
অনুষ্ঠান শুরুতে ভক্তরা বিভিন্ন ধর্মীয় স্লোগানে অনুষ্ঠান মুখরিত করে তোলে। অনুষ্ঠানে শামিল হয় নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, একরামপুর, রিকাবিবাজার, বন্দর, গোগনগর, ফতুল্লা, দেলপাড়া এলাকার অসংখ্য খাজা। ভক্ত সাধারণ নিন্মবিত্ত ও দরিদ্র ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরাই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে দলবেধে রাতের বেলা আধ্যাত্মিক বাংলা গানের অপেক্ষায় থাকেন। ওরশ উপলক্ষ্যে এখানে মেলা বসে। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা পন্যের পসরা নিয়ে মেলায় আসেন। বিক্রেতারা পন্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। ওরশের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আর মেলায় ঘুরে ঘুরে তাদের পছন্দমাফিক পন্য ক্রয় করে। মা-বোনেরাও পিছিয়ে থাকে না। তারা সংসারের অনেক প্রয়োজনীয় সামগ্রী এই মেলা থেকে ক্রয় করে থাকেন। ওরশ কমিটি কঠোরভাবে স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে শংখলা নিয়ন্ত্রন করে। এখানে কোন শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ডকে প্রশ্রয় দেয়া হয় না। বিগত ৬৫ বছরের মধ্যে এখানে আইন-শৃংখলা বিরোধী কোন কর্মকান্ড পরিলক্ষিত হয়নি। এবারও প্রহরারত আইন শৃংখলা বাহিনীকে সহযোগীতা করার জন্য গঠন করা হয়েছে খাজাবাবা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। তারা সার্বক্ষনিকভাবে অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা-সহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বাত্মক সাহায্য সহযোগীতা করবে।
উৎসব উপলক্ষ্যে ২নং বাবুরাইলে প্রবেশ পথে আজমীর শরীফের গম্বুজের অনুকরণে একটি বিশাল অস্থায়ী গম্বুজ নির্মাণ করা হয়। সেই সাথে তা আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। এছাড়াও মিন্নত আলী শাহ’র মাজার থেকে বেপারীপাড়া পর্যন্ত বেশ কিছু স্বাগত তোরণ র্নিমাণ করা হয়েছে। এক সময় ওরশ পরিচালনা করতেন পৌরপিতা আলী আহমেদ চুনকা, এরপর দয়িত্ব পালন করেন জামির আহমেদ জমু, আলহাজ্ব আমিনুল ইসলাম, আলহাজ্ব আলমাস সরদার, আলহাজ্ব মো. শহীদুল্লাহ। বর্তমানে ওরশ পরিচালনায় দায়িত্বে রয়েছেন আলহাজ্ব মনোয়ার হোসেন মনা ও চিস্তিয়া তরিকার অন্যতম খলিফা আলী আহাম্মদ চুনকার জৈষ্ঠ্যপুত্র মোহাম্মদ আলী রেজা রিপন তাকে সহযোগীতা করার জন্য একটি নির্বাচিত কমিটি রয়েছে।