নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : দীর্ঘ সময় ধরে লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বা সিলিন্ডার বোতল গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতেন বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ীরা। মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের জ্বালানির এ প্রকল্প অতিগুরুত্বপূর্ণ হলেও সরকার এলপিজির বাজার নিয়ন্ত্রণ বা দাম নির্ধারণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি। ফলে একই পণ্য স্থান ও সময় পার্থক্যের কারণে ডিলাররা ইচ্ছামতো দামে বিক্রি করতেন গ্রাহকদের কাছে। একই পরিমাণের পণ্য সরকারিটা যেখানে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেখানে বেসরকারি পর্যায়ে বিক্রি হয় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায়।
দীর্ঘ চেষ্টার পর এলপিজির দাম নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে যাচ্ছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আদালতের নির্দেশে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে গণশুনানির আয়োজন করা হয়েছে। গণশুনানি শেষে দাম নির্ধারণ করবে কমিশন। কমিশন এতদিন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণ করে আসছিল।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাইপলাইনের গ্যাস বন্ধ থাকায় দিন দিন বাড়ছে এলপিজির চাহিদা। বাড়ছে গ্রাহকের সংখ্যা। ফলে এলপিজির নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। এ জন্য লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) মূল্যহার নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে বিইআরসি। আগামী ১৪, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি গণশুনানি হবে। কমিশন গণশুনানির বিষয়ে তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তিও দিয়েছে।
এতদিন এলপিজির মূল্য ব্যবসায়ীরাই নির্ধারণ করতেন। শুধু সরকারি এলপি গ্যাসের দাম ঠিক করত বিইআরসি। ব্যবসায়ীদের হাতে ক্ষমতা থাকায় তারা ইচ্ছামতো মূল্য রাখতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারে কোনো উদ্যোগ ছিল না। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালতে গড়ায়। গত বছরের ১৩ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিলিয়ে এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
গত বছরের ২০ জানুয়ারি আদালত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণে কমিটি গঠন ও সিলিন্ডারের গায়ে মূল্য লেখার বিষয়ে নির্দেশনা জারি করলেও তা পালিত হয়নি। এর পর ভোক্তাদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যাবের এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ আগস্ট বিইআরসিকে গণশুনানির মাধ্যমে এলপিজির দাম নির্ধারণ করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কমিশন আদেশ পালনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
গত বছরের ২৯ নভেম্বর বিইআরসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। পরে ১৫ ডিসেম্বর শুনানিতে কমিশনকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দেন আদালত।
আদালত অবমাননার রুল থেকে বাঁচতে এলপিজির দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় কমিশন। আগামী ১৪, ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি গণশুনানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর আগের কাজের জন্য একটি শিডিউলও তৈরি করে।
গত ৬ ডিসেম্বর বিইআরসি এলপিজি বিপণনকারীদের কাছে মূল্য নির্ধারণের প্রস্তাব চায়। ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দামের প্রস্তাব জমার সময় দেওয়া হয়। বেসরকারি কোম্পানিগুলো এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম দাম ১ হাজার ৫০ টাকা আর সরকারি কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড সাড়ে ৭০০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়। এর পর কোম্পানিগুলোকে বিস্তারিত হিসাব জমা দিতে বলা হয়।
শিডিউল অনুসারে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থাকে সর্বশেষ আজকের মধ্যে (৪ জানুয়ারির মধ্যে) গণশুনানির বিষয়ে লিখিত বক্তব্য/মতামত কমিশনে পাঠাতে হবে। গণশুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেও ৪ জানুয়ারির কমিশনকে নিজেদের আগ্রহের কথা জানাতে হবে।
এদিকে এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে সম্প্রতি একটি সেমিনার হয়। সেমিনারে প্রায় সব বিশেষজ্ঞই বলেছেন, এলপিজি গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে একটি সমন্বিত ফর্মুলা তৈরি করা জরুরি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এলপিজি গ্যাসের দাম ওঠানামা না করে সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। এমন রেকর্ড রয়েছে- এক মাসে এক টনে ২০০ ডলার পর্যন্ত ওঠানামা করেছে দর। এমন পরিস্থিতিতে এলপিজির মূল্য নির্ধারণ করা জটিল কাজ। তাই একটি নির্দিষ্ট ফর্মুলা থাকতে হবে। সেটি আন্তর্জাতিক বাজারদরের ওঠানামার সঙ্গে সমন্বয় হতে হবে।
সেমিনারে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম বলেন, সাপ্লাই চেইনে যদি যাই তবে প্রথম দামটাকে কমাতে হবে। সরকার চায় একসময় সব মানুষ বায়োমান থেকে সরে আসবে। কিন্তু এলপিজির দাম খুব বেশি ওঠানামা করতে পারবে না। তা হলে গ্রাহক শকড হতে পারে। এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আজম জে চৌধুরী বলেন, নদীপথে এলপিজি বার্জ দিয়ে বিভিন্ন স্যাটেলাইট স্টেশনে নেওয়া হচ্ছে। এলপিজির মার্কেট ২০১৬ সালে শুরু হয়েছে। এটি স্থিতাবস্থায় আসতে সময় লাগবে। এলপিজির বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং কম দামে গ্রাহকদের সরবরাহ করতে সরকারে ভূমিকা রাখা জরুরি।
প্রসঙ্গত, ২৭টি কোম্পানি লাইসেন্স পেলেও বর্তমানে একটি সরকারিসহ ১৯টি কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করছে। এর মধ্যে ১৫টি কোম্পানি সরাসরি গ্যাসের কাঁচামাল আমদানি করে। বাকিরা বড় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে গ্যাস কিনে সিলিন্ডারে করে বিক্রি করে।