নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চে যে ভাষণ দিয়ে গেছেন তা বলে বুঝানো যাবে না। ওই সময় শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত যারা ভাষণ শুনে ছিলেন তাদের মাঝে একটা জিনিসই কাজ করেছিল আমাদেরকে যুদ্ধ করতে হবে। আমাকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য আমার বাবার অনুমতির প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু স্বাধীনতার পর মাত্র ৩ বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। নারায়ণগঞ্জের একজন কুলাঙ্গারও বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত ছিল। প্রধানমন্ত্রীর একটা কথায় আমরা ক্ষমা করে দেই। উনি বলে ছিলেন মাফ মাফ মাফ সব মাফ। সেই সাথে তিনি আইনী প্রক্রিয়ায় বিচার কাজ শুরু করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা, জাতীয় চার নেতা হত্যা, যুদ্ধাপরাধীর বিচার করেছেন। পাশাপাশি দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা রাখি বর্তমানে যারা অপরাজনীতির মাধ্যমে অপরাধ কর্মকান্ড সংগঠিত করছেন সেই সকল অপরাধেরও একদিন আইনীভাবে বিচার হবে। সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয় বাঙ্গালি জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এমন আহবান রেখে গেছেন। তাই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭মার্চের ভাষণ কোন দলের নয় এটি সমগ্র বাঙ্গালী জাতির। তাই আনন্দ শোভাযাত্রাটি কোন দলের নয় সমগ্র বাঙ্গালীর।
রোববার ১৯ নভেম্বর দুপুর ১২টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সার্কিট হাউজে বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ ইউনেস্কোর মেমোরি অব দ্যা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার অন্তর্ভূক্তির মাধ্যমে বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্যের স্বীকৃতি লাভের অসামান্য অর্জন উদযাপনের লক্ষ্যে ২৫ নভেম্বর আনন্দ শোভাযাত্রার প্রস্তুতিমূলক সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
১৯৭৫ এবং ২০০১ সালের পরবর্তী সময়ের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমার বাবাকে জেলে নেওয়া হয়েছে। আমাকে নারায়ণগঞ্জ থেকে ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। মাত্র ৩৩ হাজার টাকা জন্য আমার জন্মস্থান হীরামহল নিলামে তোলা হয়েছে। ২০০১ সালে আমাকে নারায়ণগঞ্জে থাকতে দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমার কাছে এটা বড় বিষয় না। বড় বিষয় হলো নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাদেরকে ভালোবেসেছে। যখন হীরামহল নিলামে তোলা হয়ে ছিল তখন, আমাদের পৌরপিতা আলী আহম্মদ চুনকা ও শফি হোসেন খাঁনের নেতৃত্বে, নাজিম উদ্দিন ভূইয়া, এম এ সাত্তার, আব্দুল হাই, মনির হোসেন, সিরাজ কমান্ডার সহ অনেকেই বসে সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন সবার কাছ থেকে সহযোগীতা নিয়ে হীরমহল উদ্ধার করা হবে। সেদিন একজন কসাই ১২ আনা দিয়েও সেখানে অংশ নিয়ে ছিলেন। তিনি এখনো জীবিত আছেন। অথচ এই টাকাটা একজন ব্যক্তিই দিতে পারতেন। নারায়ণগঞ্জের মানুষ আমাদের যে ভালোবাসা দিয়েছেন তাই আমরা কখনো নারায়ণগঞ্জের সাথে বেঈমানী করা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। অথচ আজকে অনেকের সাথে আমাদের লড়তে হয়। দেশের উন্নয়নে যদি কোন বিএনপির নেতা আমাদের সাথে বসে তাহলে তাকে লাল চিহ্ন দিয়ে ছবি ছাপানো হয়। যদি জাতীয় পার্টির সাথে আওয়ামীলীগ নেতারা বসে তাহলে লাল চিহ্ন দিয়ে ছবি ছাপানো হয়। অথচ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে আহবানটা এমন ছিল যে সবাইকে একসাথে যুদ্ধ করো দেশকে স্বাধীন করো। স্বাধীনতার পরও তিনি বলেছেন ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে শত্রুতা নয়।
তিনি আরো বলেন, যুগে যুগে মীরজাফর জন্ম নেয়। এখন মীরজাফর আছে আমাদের সাথে মিশে আছে। হয়তো আমরা তাদেরকে চিনতে পারি না। আগামী ২৫ নভেম্বরের আনন্দ শোভাযাত্রাটি কোন দলের নয়। এটি সর্বস্তরের মানুষের। আমরা সেদিন দেখবো কারা আসেন আর কারা আসেন না। কাদের আনন্দ হয় আর কাদের গাঁ জ্বলে।
আনন্দ শোভাযাত্রায় আগতদের মুজিব কোর্ট পড়ে আসার জন্য প্রস্তাব রাখেন প্রফেসর শিরীন বেগম। পরিপ্রেক্ষিতে সেলিম ওসমান বলেন, আনন্দ শোভযাত্রায় মুজিব কোর্ট পড়ে আসার প্রস্তাবটি অত্যন্ত ভালো প্রস্তাব। কিন্তু এতো অল্প সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসকের একার পক্ষে এটা করা সম্ভব হবে না। আমি সকলের প্রতি অনুরোধ রাখবো যারাই আনন্দ শোভযাত্রায় অংশ নিবেন তারা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে যেন অন্তত্য কিছু লোকের জন্য মুজিব কোর্টের ব্যবস্থা করবেন। যারা মুজিব কোর্ট পড়ে আসবে তাদেরকে সেচ্ছাসেবীরা সামনের সাড়িতে এগিয়ে নিবে এতে করে আনন্দ শোভাযাত্রা আরো বেশি বর্ণাঢ্য হবে। এছাড়াও শোভাযাত্রায় পুলিশ বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা তাদের নিজস্ব বাদ্য দল, ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রায় অংশ নিবেন।
জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমি অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। উনি কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে সব সময় উনার সহকর্মীদের সাথে পরামর্শ করতেন। কিন্তু ৭মার্চের ভাষণের পূর্বে আমরা ৩ মার্চ একটি সভা করে ছিলাম। সেখানে আকস্মিক ভাবে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়ে ছিলেন এবং বলে ছিলেন ৭মার্চ তিনি পরবর্তী কমসূর্চী ঘোষণা দিবেন। ৭মার্চের পূর্বে অনেকেই বঙ্গবন্ধুকে চিরকুটের মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে ছিলেন। কিন্তু ওইদিন বঙ্গবন্ধু কারো কোন পরামর্শ গ্রহণ করেননি। সম্পূর্ন দেশপ্রেম এবং মনের আবেগ থেকে বঙ্গবন্ধুই ৭মার্চের ভাষণ দিয়ে ছিলেন। উনার ভাষণে একটি জাতিকে একত্রিত করে যুদ্ধে নামিয়ে ছিলেন। ইউনেস্কো যা বিশ্বপ্রমাণ্য স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশকে সম্মানীত করেছেন। এরআগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমেই ১৯৯৮ সালে ২১ ফেব্রুয়ারীকে আর্ন্তজাতিক মার্তৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি দিয়ে ছিলেন।
জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের নারী সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মতিয়ার হোসেন, মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি চন্দন শীল, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, জেলা মহিলালীগের সভানেত্রী প্রফেসর শিরীন বেগম, সরকারী তোলারাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মধূমিতা চক্রবর্তী, বিকেএমইএ এর সহ-সভাপতি(অর্থ) হুমায়ন কবির খান শিল্পী, পরিচালক জিএম ফারুক, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ সভাপতি মোর্শেদ সারোয়ার সোহেল, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস, সদর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা তাহমিনা বিনতে শেখ, বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা পিন্টু বেপারী সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতৃবৃন্দরা।