নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( শহর প্রতিনিধি ) : পত্রিকা অফিসে হামলা ভাঙচুর এবং সম্পাদককে গুলি করে হত্যা হুমকীর ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ ও পুলিশ সুপার জায়েদুল আলমকে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকরা। ১৫ই ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে সদর উপজেলার চাঁনমারী এলাকা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জের সম্পাদক জাবেদ আহাম্মেদ জুয়েল।
এসময় উপস্থিত ছিলেন দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জের উপদেষ্টা সম্পাদক ইমতিয়াজ আহমেদ, দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি শরীফ সুমন, নিউজ নারায়ণগঞ্জ ২৪ ডট কমের নির্র্বাহী সম্পাদক তানভীর হোসেন, দৈনিক সমকালের জেলা ফটো সাংবাদিক মেহেদী হাসান সজীব, দ্য ডেইলি স্টার জেলা প্রতিনিধি সনদ সাহা সানি, জনকন্ঠ জেলা ফটো সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রীতম, আজকের পত্রিকার নারায়ণগঞ্জ সংবাদ দাতা সাবিত আল হাসান, সময়ের নারায়ণগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার অরিফ হোসেন কনক, জাগো নিউজ এর জেলা প্রতিনিধি মোবাশ্বির শ্রাবন সহ প্রমুখ।
স্মারকলিপি প্রদানকালে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেছেন, অপরাধীরা আইনের আওতায় আসবেই। আইন সবার জন্য সমান। সন্ত্রাসীদের ভয় পাবেন না। আপনারা আপনাদের লেখুনি চালিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে আমি প্রথম দিনেই জানতে পেরেছি। প্রেসক্লাবের সাংবাদিকেরাও তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমিও এসপি সাহেবকে বলেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।
এদিকে স্মারকলিপি প্রদানকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, অপরাধী যেই হোক তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। শান্তিপূর্ণ নারায়ণগঞ্জকে কোনভাবেই অশান্ত করতে দেওয়া হবে না। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনা হবে। নারায়ণগঞ্জে কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ্য করা হয়, ১২ই ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে অর্র্ধশতাধিক সন্ত্রাসী দলবদ্ধ হয়ে এসে বঙ্গবন্ধু সড়কে চাষাঢ়ায় সমবায় মার্কেটের সামনে অবস্থান নেয়। পরে ১৯৩ প্রেসিডেন্ট রোডস্থ সিরাজ ম্যানশনের চারতলায় দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকা অফিসে অতর্কিত হামলা করে। ওই সময়ে ভবনের নিচে থাকা প্রহরী বাধা দিতে চাইলে তাকে হুমকি দেয় ও মারধরের চেষ্টা করে দূরে সরিয়ে দেয়। একই ভবনের নিচতলায় একটি রেস্টুরেন্ট, দ্বিতীয় তলায় রাজারবাগ পুলিশের লাইনের একজন দন্ত চিকিৎসকের চেম্বার ও অন্যান্য ফ্লোরে আবাসিক লোকজন বসবাস করে।
সন্ত্রাসীরা অফিসে প্রবেশ করে উপস্থিত সাংবাদিক ও স্টাফদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেয়। দুই সাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার আগের দিন ১১ ফেব্রুয়ারি সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার প্রধান সংবাদ ছিল যা ছিল খসড়া চার্র্জশিটে। সংবাদটি প্রকাশের কারণে সন্ত্রাসীরা একের পর এক হুমকি দিতে থাকে।
হামলাকারীরা প্রায় ১৫ মিনিট কার্যালয়ে অবস্থান করে হুমকি দিয়ে চলে যান। যাওয়ার আগে অফিসের বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেন। অফিসের সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করে ক্যামেরার রেকর্ড বক্স ও একটি কম্পিউটারের হার্ডডিক্সও খুলে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময়ে মটরসাইকেলের মহড়ায় পুরো শহরে এক আতঙ্ক ও ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। ওই ছবিও কয়েকজন রেকর্ড করেন। একসঙ্গে এত উচ্ছৃঙ্খল জনতার বেআইনী প্রবেশে পুরো ভবনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাছাড়া পুরো প্রেসিডেন্ট রোড ও আশপাশের লোকজনও ভীত হয়ে উঠে।
এ ঘটনা তাৎক্ষনিক পুলিশ প্রশাসন ও র্যাব ১১ কে অবহিত করা হলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। পরে ওইদিন রাতে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০ থেকে ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। যার প্রেক্ষিতে পুলিশ ১১জনকে গ্রেফতার করেছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সদস্য, জাতীয় গণমাধ্যমের প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তীব্র নিন্দা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন।