নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : র্যাবের হাতে গ্রেফতার ব্যবসায়ী হেলেনা জাহাঙ্গীরকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। পুলিশের রিমান্ড আবেদনের শুনানি করে ঢাকার মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী ৩০ই জুলাই শুক্রবার রাতে এ আদেশ দেন ।
আওয়ামী লীগ থেকে পদ হারানো হেলেনা জাহাঙ্গীরকে বৃহস্পতিবার রাতে তার গুলশানের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। শুক্রবার তাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়, দায়ের করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা।
র্যাবের অভিযোগ, নানা ধরনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সোশাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালানোর একটি সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলেছিলেন হেলেনা জাহাঙ্গীর। শুক্রবার সন্ধ্যার পর তাকে সেই মামলায় ঢাকার হাকিম আদালতে হারি করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে হেলেনার পক্ষে আইনজীবী মো. শফিকুল ইসলাম রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, হেলেনা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মন্ত্রী, এমপি ও দেশের সম্মানিত নাগরিকদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে সরকারের ভাবমূর্তি ও দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন।
অন্যদিকে হেলেনার আইনজীবী বলেন, যার সম্মান নষ্ট করা হয়েছে শুধু তিনিই মামলা করতে পারবেন। অন্য কেউ এই মামলা করতে পারবেন না।
তিনি যুক্তি দেন, এজাহারে কোথাও কোনো উল্লেখ নাই, কখন কোথায় কীভাবে কার বিরুদ্ধে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। আসামি একজন সিআইপি, এই মামলায় রিমান্ড কী দরকার ? রিমান্ডের কোনো যুক্তি নাই।
হেলেনা জাহাঙ্গীর এ সময় বলেন, আমি সরকারি লোক, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ২৫টি দেশ সফর করেছি। আমি কেন সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাব ?
তখন প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও (মোবাইলের কল রেকর্ড) আদালতে উপস্থাপন করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। সেই রেকর্ড আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয়।
শুনানি শেষে বিচারক হেলেনার জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে তিন দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন পুলিশকে।
এফবিসিসিআইর পরিচালক হেলেনা জাহাঙ্গীর জয়যাত্রা গ্রুপের কর্ণধার। জয়যাত্রা টেলিভিশনের চেয়ারপারসন হেলেনা নিজেকে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন।
হেলেনা জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য ছিলেন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগেরও উপদেষ্টা পরিষদে ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ নামের একটি ভূইফোঁড় সংগঠনে হেলেনা জাহাঙ্গীরের সভাপতি হওয়ার খবর চাউর হলে সম্প্রতি তাকে দুই কমিটি থেকেই বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।
বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকার গুলশানে হেলেনার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে মিরপুরে হেলেনার মালিকানাধীন জয়যাত্রা আইপিটিভির কার্যালয় এবং জয়যাত্রা ফাউন্ডেশন ভবনেও অভিযান চলে।
তখন প্রমাণ হিসেবে একটি অডিও (মোবাইলের কলরেকর্ড) আদালতে উপস্থাপন করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু। সেই রেকর্ড আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয়।
এদিকে ২৯ই জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান শেষে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, হেলেনার বাসায় মদ, হরিণের চামড়া, ক্যাসিনো বোর্ড, ওয়াকিটকিসহ বেশ কিছু অবৈধ সরঞ্জাম মিলেছে। আর মিরপুরে অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাদির শাহ বলেন, জয়যাত্রা টিভির কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না।
হেলেনার বিরুদ্ধে মাট পাঁচটি মামলা হবে জানিয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ওয়াকিটকি পাওয়ায় টেলিযোগাযোগ আইনে, ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে, মদ পাওয়ায় মাদক আইনে, হরিণের চামড়া পাওয়ায় বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে এবং বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে।
সুত্র : বিডি নিউজ ২৪ ডট কম।