নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রূপগঞ্জ প্রতিনিধি ) : রূপগঞ্জে ক্যাসিনো ডন সেলিম প্রধানের দখলের থাকা ভুলতা-গোলাকান্দাইল চার তলা বিশিষ্ট ফ্লাইওভারের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অংশের সওজের জমি দখল মুক্ত করেছে প্রশাসন। গতকাল শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দিনব্যাপী যুগ্ন সচিব ও সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ফারুকীর নেতৃত্বে জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং লিমিটেডের অবৈধ দখলে থাকা ১৫ শতাংশ জমির পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম সহায়তায় আরো বেশকয়েকটি দোকান ঘরসহ পাকা স্থাপনা ভেঙ্গে দখলমুক্ত করা হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে আরো উপস্থিত ছিলেন, সহকারী কমিশনার ভুমি তরিকুল ইসলাম, সড়ক ও জনপদের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর হোসেন, সহকারী উপ-পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন শামীম, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদুল হাসান, ইন্সপেক্টর শহিদুল আলম, ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার এ মান্নান প্রমূখ।
এর আগে, গত সোমবার দুপুরে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৩২ ফ্লাইটটি ছাড়ার আগ মূহূর্তে ক্যাসিনো ডন সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে র্যাব। এর পর থেকেই ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধানের মালকানাধীন জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং লিমিটেডের অবৈধ দখলে সওজের ১৫ শতাংশ জমিতে পাকা স্থাপনার বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশের পর অবৈধ দখলের বিষয়টি আবারও প্রশাসনের নজরকাড়ে। পরে শনিবার সকাল থেকে দিনব্যাপী জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের পাকা স্থাপনা ভেঙ্গে উচ্ছেদ করা হয়।
জানা গেছে, ভুলতা-গোলাকান্দাইল এলাকা ক্রস করেছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও এশিয়ান হাইওয়ে বাইপাস সড়কটি। এ এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাটবাজার ও ব্যস্ততম থাকায় প্রতিদিন শত শত যানবাহন এবং হাজার হাজার মানুষের চলাফেরা। প্রতিদিনই এ এলাকায় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হতো। নিত্যদিনের যানজটের কারণে ভোগান্তির যেন অন্ত ছিলনা। এ যানজট নিরসেরনের লক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের চার তলা বিশিষ্ট ফ্লাইওভারটি কাজ সম্পন্ন হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগের একোয়ারভুক্ত মাত্র ১৫ শতাংশ জমি ক্যাসিনো ডন সেলিম মিয়া ওরফে সেলিম প্রধানের জবরদখলে থাকায় কাজটি অসমাপ্ত থেকে যায়। বেশ কয়েকবার ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসন বার বার ওই জমিতে থাকা পাঁকা স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলেও বিশেষ ফোনের কারণে উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যায়। ফ্লাইভারের গোলাকান্দাইল সাওঘাট এলাকার অংশে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের মালিক সেলিম প্রধানের দখলে থাকা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অংশের সাওঘাট এলাকায় সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রায় ১৫ শতাংশ জমি। ওই জমিতে একটি মসজিদসহ পাঁকা স্থাপনা ছিলো। জমি টুকু দখলে থাকায় সড়কের ওই অংশে মাত্র ১০ থেকে ১২ ফুট প্রশস্থ্য। সড়কের ওই অংশটুকু দিয়ে বড় ধরনের যানবাহন চলাফেলা করতে পারতো না। এমনকি রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করা সম্ভব হতো না। জমি দখলমুক্ত করে সড়ক প্রশস্থ্য করায় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনুচ্ছুক জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড প্রিন্টিং লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানান, বাইরে থেকে থেকে কোম্পানীটির অবস্থা জরাজীর্ণ দেখা গেলেও ভেতরে রয়েছে সব বিলাস বহূল সব ইন্টেরিয়র ডিজাইন। এছাড়া ভেতরে আছে লাক্সারিয়াস সব আসবাবপত্র। তা দেখে যে কারোরই চোখ ছানাবড়া হওয়া উপক্রম হবে।
র্যাবের দেয়া তথ্যানুসারে, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা বলে জানায় যায়। সেলিমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর তার গুলাশান-২ এর ১১/১ এ রোডে ও বনানীর অফিসে অভিযান চালিয়ে ৪৮ টি বিদেশি মদের বোতল, নগদ ২৯ লাখ ৫ হাজার টাকা, ২৩ টি দেশের বৈদেশিক মুদ্রা (যার মূল্য আনুমানিক ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, ১২ টি পাসপোর্ট ও ১২ টিপ ব্যাংকের চেকবই, একটি বড় সার্ভার ও ৪ টিপ ল্যাপটপ ও হরিণের চামড়া।
যুগ্ন সচিব ও সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান ফারুকী বলেন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে এসকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এশিয়ান হাইওয়ে ও ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে পর্যায়েক্রমে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।