প্রধান সড়কের পাশে চামড়া স্তুপ, অত:পর জলাশয়ে
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : এবার ঈদ-উল আযহায় পশুর চামড়া ব্যবসায় ধস নেমেছে। আল্লাহর নামে কোরবানির পরে যে সকল চামড়া বা বিক্রি করা অর্থ দান করতে হয়। আর এই দান এতিমখানা, মাদ্রাসা এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীই পেয়ে থাকে। কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ীই এ সময় আয় করেন। কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। চামড়ার দাম পেয়ে যাদের উপকৃত হওয়ার কথা তারা এবার তাও পাচ্ছেন না।
তাই নায্য দাম না পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে ফতুল্লা স্টেডিয়াম সংলগ্নে ময়লার ভাগাড়ে ফেলে রাখা হয় শত শত কোরবানির পশুর চামড়া। টানা দুই দিন ধরে এ চামড়া পড়ে থাকায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে সেখানে চলাচলকারী র্সবসাধারন মানুষ।
১৪ আগস্ট বুধবার বিকালে দেখা যায়, লিংক রোডে সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার লামাপাড়া এলাকায় খান সাহেব ওসমান আলী জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে চামড়া স্তপ হয়ে আছে। এরই মধ্যে চামড়াগুলোতে পঁচন ধরায় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সীমানা তোরণের ঠিক নিচেই চিত্রটা দেখা গেছে। তবে এখানে র্বজ্য নিয়ে সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলা প্রশাসন আগেও একে অপরকে দূষেছেন। কেউই দায়ভার নিচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা বারিক বলেছেন, আমি সংবাদটি পেয়েছি। আমার কাছে এ ব্যাপারে বেশ কয়েকজন অভিযোগ করেছে। এটা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার মধ্যে পড়েছে, তবুও আমি সেখানে যাবো।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহ এহতেশামুল হক জানান, এটি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের বাইরে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনের জায়গায় পড়েছে। যদি সিটি করপোরেশন এলাকার ভেতরে এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমাকে জানালে আমরা সাথে সাথেই তা পরিষ্কার করে দেব। যদি তারা আমাদের কাছে সহযোগিতা চায় তাহলে আমরা সহযোগিতা করবো। এটার পাশেই নম পার্ক ও ফতুল্লা স্টেডিয়াম কিন্তু এগুলোতে তো আমাদের নাসিকের কোন হোল্ডিং নাম্বার নেই। আমরা আমাদের সীমানা সম্পর্কে অবহিত রয়েছি।
স্থানীয় এলাকাবাসীসহ পথে নিয়মিত চলাচলকারী সাধারণ মানুষ দ্রুত এর সমাধানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরবর্তিতে ওইদিন রাতেই চামড়া স্তুপ অপসারনে এগিয়ে আসেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (সদর ইউএনও) নাহিদা বারিক। ঘটনার গুরুত্ব অনুধাবন করে ফেলে যাওয়া কোরবানির বর্জ্য ও চামড়া স্তুপ অপসারনের ব্যবস্থা করতে ২জন চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন তিনি। এছাড়াও ১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সদর উপজেলার লোকজন এ বর্জ্য অপসারনের কাজ শুরু করবেন বলে জানা যায়। তবে পরের দিন স্থানান্তর হলেও সেগুলো ফেলে রাখা হয় পাশেরই একটি জলাশয়ে। এতে করে পরিবেশ চরমভাবে দূষিত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে এবার লোকসানের মুখে পড়েছেন। চামড়া ব্যবসায় এমন ধস নেমে এসেছে যে অনেকেই কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রিই করতে পারেননি। এতে করে গরীবের হক ভেস্তে গেল। যে চামড়া গেলো বছর তিন থেকে চার হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেই চামড়ার মূল্য এবার দু শো থেকে তিন শত টাকা বলছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। যার কারনে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই চামড়া বিক্রি না করে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে নিয়ে ফেলে দিয়ে গেছেন।
এছাড়া মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষরা যারা চামড়া নিয়েছেন তারা এগুলো বিভিন্ন স্থানে মাটি খুড়ে চাপা দিলেও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা তা না করে চামড়াগুলো এই সড়কের পাশে এনে ফেলে গেছেন। এতে করে এই দুর্গন্ধে মানুষের অসুস্থ্য হবার অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়ভাবে পরিবেশের চরম বিপর্যয়ও ঘটছে।