নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রির্পোটার ) : বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং যথাযথ ধর্মীয় মর্যদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে আজ সোমবার ১২ আগস্ট নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে ঈদ-উল আযহা উদযাপিত হবে। মহান আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে পশু কোরবানি দেয়ার মহিমান্বিত দিন। আরবি শব্দ ঈদ–এর অর্থ আনন্দ উৎসব এবং আযহা এর অর্থ পশু জবাই করা। মুসলমানদের জন্য ঈদুল আযহা একই সঙ্গে পশু কোরবানি দেয়ার এবং উৎসব করার দিন। কোরবানির উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা।
কোরবানি দেয়ার প্রথম নির্দেশ এসেছিল মুসলিম জাতির পিতা হজ্বরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে। তিনি আল্লাহকে বেশি ভালোবাসেন ও মান্য করেন, নাকি সন্তানের গুরুত্ব তাঁর কাছে বেশি– সেটা পরীক্ষা করাই ছিল উদ্দেশ্য। এজন্য তাঁকে আদরের পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে কোরবানি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। নির্দেশ অনুযায়ী ইবরাহিম (আ.) প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, ইসমাইল (আ.)-ও সানন্দে সম্মত হয়েছিলেন। দেখে সন্তুষ্ট হয়েছিলেন আল্লাহ। পুত্রের গলদেশে ছুরি চালানো শুরু করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ইবরাহিম (আ.)-কে এই সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে বলা হয়েছিল, তিনি যেন ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি পশু কোরবানি দেন। সে অনুযায়ী পশুই কোরবানি দিয়েছিলেন হজ্বরত ইবরাহিম (আ.)। সেই থেকে পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে মুসলমানরা পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করে আসছেন। বিধানটি চূড়ান্ত হয়েছে শেষ রাসূল হজ্বরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে।
দিনটি উপলক্ষে পশু কোরবানিই অবশ্য একমাত্র করণীয় নয়। তার আগে পবিত্র হজ্বকে মুসলমানদের জন্য ফরজ বা অবশ্যপালনীয় করা হয়েছে। হজ্ব পালিত হয় হিজরি সালের শেষ মাস জিলহজ্ব মাসে। এ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা গিয়ে পবিত্র নগরী মক্কা মুকাররমায় সমবেত হন। ৮ জিলহজ্ব থেকে তিন দিন ধরে তারা মিনা, মুযদালিফা ও আরাফাতের ময়দানসহ নির্ধারিত স্থানগুলোতে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। বলতে থাকেন, লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। অর্থাৎ হে আল্লাহ, আমি হাজির হয়েছি। তারপর আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবায় গিয়ে চারদিকে সাতবার ঘুরে ‘তাওয়াফ’ করতে হয়। ‘সাঈ’ করার জন্য যেতে হয় সাফা ও মারওয়া নামের দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে, যেখানে শিশু ইসমাইল (আ.)-কে পানি খাওয়ানোর জন্য মা হাজেরা ছুটোছুটি করেছিলেন এবং যেখানে আল্লাহর কুদরতে তৈরি হয়েছিল জমজম কূপ। সাতবার ‘সাঈ’ করার তথা সাফা ও মারওয়ার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করার পাশাপাশি আবে জমজম বা জমজমের পানিও পান করেন হজ্বকারীরা। সবশেষে আসে কোরবানির পালা, উদযাপিত হয় ঈদুল আযহা। পবিত্র এ দিনটিতে পশু কোরবানি দেয়ার আগে দু’ রাকাত ওয়াজিব সালাত তথা নামায আদায় করতে হয়। এবছর হজ্ব পালিত হয়েছে গতকাল, শনিবার। সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ঈদ উদযাপিত হয়েছে ১১ আগস্ট রবিবার।
বলা দরকার, ঈদুল আযহা কেবলই পশু কোরবানি দেয়ার এবং উৎসব করার দিন নয়। দিনটির প্রধান উদ্দেশ্য মুসলমানদের মধ্যে আল্লাহ তালার প্রতি পরিপূর্ণ ভালোবাসা ও আনুগত্য তৈরি করা এবং স্বার্থচিন্তার উচ্ছেদ করে আত্মত্যাগের শিক্ষা দেয়া। আল্লাহতা’লার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আযহার প্রকৃত শিক্ষা। সুতরাং কেবলই পশু কোরবানি দেয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকার পরিবর্তে মুসলমানদের উচিত নিজেকে আল্লাহতা’লার কাছে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করার এবং তাঁর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা। একই কারণে পশু কেনা উচিত সৎপথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে। পশুর গোশ্ত যত বেশি সম্ভব আত্মীয়–স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে। এভাবে সব মিলিয়েই কোরবানি তথা আত্মত্যাগ করার শিক্ষা দেয় পবিত্র ঈদুল আযহা। আমরা আশা করতে চাই, বাংলাদেশের মুসলমানরাও দিনটির মূল শিক্ষাগুলো অনুধাবন করবেন এবং চেষ্টা করবেন যাতে প্রতিবেশি ও স্বজনসহ অন্যরাও উৎসবে শরিক হতে পারেন।