মতলব উত্তরে ১০১তম সোলেমান লেংটার ওরশ শুরু

নারায়ণগঁঞ্জ বার্তা ২৪ ( চাঁদপুর সংবাদ দাতা ) : মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর (বেলতলী) গ্রামে ঐতিহ্যবাহী শাহ্ সূফি সোলেমান লেংটার মাজারে ৭ দিন ব্যাপী ৩১ মার্চ আজ রবিবার ১০১তম ওরশ শুরু। ৭ দিনের এ মেলা আগে-পরে এক মাস স্থায়ী থাকে। তবে মাস ব্যাপী মেলা ৩০ মার্চ শনিবার সকালে মেলা উদ্বোধন করা হয়েছে। মিলাদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় মেলা।

সোলেমান লেংটা উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়ার দাবিদার। বাংলা ১২৩০ সালে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার গোবিনাদপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে এক দরিদ্র পরিবারে শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আলা বঙ্গ ভূঁইয়া। জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন মতলবের বিভিন্ন অঞ্চলে। সোলেমান লেংটা কখনও পোশাক পরিধান করতেন না। তাই তার মাজারটি লেংটার মাজার হিসেবেই পরিচিত। লেংটা ফকির ১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। সোলেমান শাহ নারায়ণগঞ্জের বকতগুলোর রাধানগরে এক নারীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা ফকিরি লাভ সম্পর্কে জানা যায়, ইমাম উদ্দিন মিয়ারা ছিল তিন ভাই। তিন ভাই নৌকা করে ভাদ্র মাসের এক অমাবস্যা রাতে সোনারগাঁয়ে তাদের পীরের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। নৌকার মাঝি ছিলেন সোলেমান শাহ্। পথিমধ্যে বৃষ্টি হয়, তিন ভাই আরাম করে নৌকার ভেতর। সোলেমান শাহ ভিজে ভিজে নৌকা চালায় এবং গন্তব্যে হাজির হয়ে যায়। নির্দিষ্ট সময় পীর আসেন এবং এ দৃশ্য দেখে রাগ হয়। পীর তখন তিন ভাইকে উলঙ্গ হয়ে আসতে বলে। তিন ভাই চিন্তায় পড়ে যায়। আপন মায়ের পেটের তিন ভাই কীভাবে উলঙ্গ হবে একে অপরের সামনে। পীর সাহেব মাঝি সোলেমানকে উদ্দেশ্য করে কাছে আসতে বলে। সোলেমান কাছে যায়। পীর তাকে হা করতে বলেন এবং মুখে ফুঁক দেয়। সেখান থেকেই সোলেমান লেংটা হয়ে বাড়ি ফিরে। সোলেমান লেংটা কখনো পোশাক পরিধান করতেন না বলেই তিনি লেংটা নামে পরিচিত। এ মাজারটিকে সবাই লেংটার মাজার নামেই চিনে।

সোলেমান লেংটার অনেক অলৌকিক ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে সোলেমান লেংটা কালিপুর রমিজ উদ্দিন প্রধানীয়ার বাড়িতে যান। দেখেন নারীরা নদী থেকে ঘট পুরিয়ে ঘর, উঠান লেপছে। তিনি তাদের পানি আনার কষ্ট দেখে তাদের চোখ বন্ধ করতে বলেন। তারা চোখ বন্ধ করলে লেংটা তার নফস টেনে প্রায় ২-৩ হাত লম্বা করে পুরো উঠান পানিতে ভিজিয়ে দেয়। এ ঘটনা তিনি বিভিন্ন গ্রামে করেছেন। এক সময় মানুষ হজে যেত জাহাজে কিংবা পায়ে হেঁটে। অনেক দিন লাগতো, হজে যাওয়ার সময় অনেকেই লেংটাকে বদরপুর দেখে গেছে, হজ পালন করার সময় অনেকেই তাকে কাবা শরিফে দেখেছেন নামাজ আদায় করতে। এমন অসংখ্য অলৌকিক ঘটনা রয়েছে বলে জানা যায়।

সোলেমান লেংটার বোনের বাড়ি বদরপুরে মাজারটি অবস্থিত। ১৩২৫ বাংলা সনের ১৭ চৈত্র শাহ্ সূফী সোলেমান লেংটা তার বোনের বাড়ি বদরপুর গ্রামে মৃত্যু বরণ করলে সেখানে কবর দিয়ে মাজার স্থাপন করা হয়। প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে তার মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এবং মেলা বসে। ওরশ শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে ও পর পর্যন্ত মেলা স্থায়ী হয়।

এ ছাড়া প্রতিবছর ভাদ্র মাসে ও সপ্তাহের বৃহস্পতিবার মাজারে ভক্তদের আগমন ঘটে। চৈত্র মাসের ১৭ তারিখের মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থানসহ পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে প্রতিদিন লক্ষাধিক ভক্ত, আশেকান ও সাধারণ জনগণ আসা-যাওয়া করেন। ওরশকে কেন্দ্র করে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে মেলায় বসেছে রকমারি দোকান ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ভক্তদের আস্তানা। মেলায় বিভিন্ন প্রকার পণ্য বিক্রয় ও ক্রয় হয়। কেউ কেউ মাদক ও অশ্লীলতার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে রাখে।

৭ দিনের এ মেলায় আগত দোকান থেকে অনুপাতে ২ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। মাজারে মানতে দেয়া হচ্ছে- গরু, ছাগল, নগদ অর্থ, আগরবাতি ও মোমবাতি। মাজারে প্রতিদিন উঠছে লাখ লাখ টাকা। সব মিলে এখানে বাণিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এ টাকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। এ টাকায় অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। সারা বছর এ মাজারটি অর্থ পাওয়ার সেক্টরে পরিণত হয়েছে। এর ব্যতিক্রম কিছু করার জন্য ওরশ পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।

মাজারের খাদেম মতিউর রহমান লাল মিয়া বলেন, শাহ্ সূফি সোলেমান লেংটার ওফাত দিবস উপলক্ষ্যে ১০১তম ওরশ শরীফ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওরশে দেশ-বিদেশ থেকে ভক্ত-আশেকান মাজার এলাকায় উপস্থিত হচ্ছে। ওরশ শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে মাজার কমিটির পক্ষ থেকে।

শনিবার সাংবাদিকদের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অতীতে কী হয়েছে, তা নিয়ে ভাবার সময় নেই। এখনকার বিষয় হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে মেলা প্রাঙ্গণ শতাধিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত