নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : রাজধানীর দক্ষিণ মাণ্ডা এলাকায় বুধবার সকাল থেকেই মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে এলাকার মাদ্রাসা রোডে জাকিরের বাড়িতে গুপ্তধন উঠেছে। সেখানকার এক ভাড়াটিয়ার ঘর থেকে একের পর এক পাওয়া যাচ্ছে টাকার বস্তা। ফলে সকাল থেকেই ওই বাসার চারপাশে ভিড় করে অসংখ্য কৌতূহলী মানুষ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। তারা সেখানে গিয়ে সাজেদা বেগম নামে ৭২ বছর বয়সি এক বৃদ্ধার ঘর থেকে সত্যিই ১৩টি বস্তা ভর্তি ৭৬ হাজার টাকা এবং ছোট ছোট আরও অনেক ব্যাগে থাকা ৮৮ কেজি বিভিন্ন ধরনের কয়েন উদ্ধার করে। পরে এসব টাকা ও কয়েন মুগদা থানা নিজেদের হেফাজতে নেয়।
বাড়িটির মালিক ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অথরাইজড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ট্রেজার) জাকির হোসেন বলেন, মাস তিনেক আগে বৃদ্ধা সাজেদা তার মেয়ে আমেনাকে নিয়ে মাসিক ৪ হাজার টাকায় দুই রুম ভাড়া নেন। ভিক্ষাবৃত্তি করে তারা সংসার চালান তা আমার জানা ছিল না। বাসায় ওঠার কয়েক দিন পর থেকে আমেনাকে আর দেখা যাচ্ছিল না। এদিকে অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন সাজেদা বেগমও। প্রতিদিনই রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনা প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে ঘর ভরিয়ে ফেলেন তিনি। এক পর্যায়ে ঘরে বস্তার স্তূপ রেখে বারান্দায় ঘুমানো শুরু করেন ওই বৃদ্ধা। এক মাস ১০ দিন পর আমি তার কাছে ঘর ভাড়া চাই। রাতে এসে দেবেন বলে সেই যে তিনি গেলেন আর এলেন না। এভাবে কাটে আরও প্রায় দুই মাস। ভেবেছিলাম ভাড়া জোগাড় করতে না পারায় তারা আর আসবেন না। অন্য কোথাও উঠেছেন।
তাই স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে সাজেদা বেগমের ঘর থেকে বস্তার স্তূপ ও নষ্ট কাপড় সরিয়ে সেগুলো বাইরের বারান্দায় এনে রেখেছিলাম। সেগুলো বিক্রি করতে গত সোমবার সকালে এলাকার কয়েকজন ভাঙারি ব্যবসায়ীকে ডেকে আনি। তারা কয়েকটি বস্তা বাইরে আনতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। কারণ ছোট ছোট ব্যাগগুলোর ছিল প্রচণ্ড ভারী। পরে কৌতূহলবশত কয়েকটি ছোট ব্যাগ খুললে তার ভেতর থেকে প্রচুর কয়েন বেরিয়ে আসে। বড় বস্তাগুলো খুলেও দেখা যায় তাতে রাশি রাশি টাকা ভরা।
এর পর একে একে বস্তা ও কাপড়ের ভাঁজে পাওয়া যায় ৭৬ হাজার টাকা (এক টাকা, দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০০-৫০০ টাকার নোট) ও ৮৮ কেজি টাকার কয়েন (চার আনা থেকে শুরু করে ৫ টাকা)। ছয় থেকে সাত জন মানুষ সেদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত গুনেছে এসব টাকা।
জাকির জানান, যে টাকাগুলো উদ্ধার হয়েছে তার অধিকাংশই ছেঁড়া-ফাটা। এই টাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে সকাল থেকে এলাকাবাসী আমার বাড়িতে গুপ্তধন পাওয়া গেছে বলে ভিড় করে। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর ও পুলিশকে জানানো হয়েছে। টাকা ও কয়েনগুলো মুগদা থানা পুলিশের হেফাজতে আছে। তার সঙ্গে কথোপকথনের মধ্যেই হন্তদন্ত হয়ে আমেনাকে নিয়ে হাজির হন সাজেদা বেগম। তিনি অসুস্থ বোধ করায় বসে পড়েন বারান্দার সিঁড়িতেই।
আমেনা জানান, তার বাবা মো. সোবহান বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। তার আরও দুই ভাইবোন ছিল। কিন্তু তারাও মারা গেছে। তাই পেটের দায়ে গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সোনাতলা দড়িহাসরাস থেকে তারা ঢাকায় আসে। কোনো কাজ না পেয়ে মা-মেয়ে ভিক্ষা করে দিন চালাতেন।সেই থেকে ভিক্ষার টাকা বস্তায়, কাপড়ের ভাঁজে রাখতে শুরু করেন তার মা। টাকা জমানো তার নেশা।
সাজেদা বেগম জানান, বাড়ি ভাড়ার টাকার জন্য নয়, অসুস্থ হয়ে পড়ায় এতদিন তারা আসতে পারেননি। তাদের অবর্তমানে ঘরের তালা ভেঙে টাকার বস্তা, মালপত্র বের করা বাড়িওয়ালার উচিত হয়নি। তবে বস্তায় কত টাকা ছিল তা তিনি জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রলয় কুমার শাহা বলেন, টাকার মালিক ভিক্ষুক বৃদ্ধা ও তার মেয়েকে পাওয়া গেছে। বস্তা থেকে উদ্ধার টাকা তাদের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।