নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের প্রভাবশালী সাংসদ ভ্রাতৃদ্বয় একেএম শামীম ওসমান ও একেএম সেলিম ওসমান। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে এমপি হিসেবে রয়েছেন শামীম ওসমান এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর ও বন্দর) আসনে রয়েছেন সেলিম ওসমান। যারা ইতি মধ্যেই একাদশ নির্বাচনে আবারো প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনের প্রভাবশালী এই দুই ভ্রাতৃদ্বয়কে ঠেকাতে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন দুই সাবেক সাংসদ। যাদের একজন চার আসনের বিএনপি মনোনিত সাবেক সাংসদ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের নেতৃত্বে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা দেওয়াতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনটি পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে তিনি মাঠে নামবেন। তবে, মনোয়ন দেওয়া না দেওয়া সম্পূর্ণই দলের ইচ্ছে বলেও তিনি জানিয়েছেন। আর শামীম ওসমানের বিপরীতে লড়াই করার মতো একমাত্র গিয়াসউদ্দিনকেই যোগ্য বলে মনে করছেন তৃণমূল ও সাধারণ মানুষ।
তৃণমূল ও সাধারণ মানুষের মতে, একের পর এক মামলায় জর্জড়িত গিয়াসউদ্দিন। তারপরও তিনি দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন তার অনুসারি নেতাকর্মীদের নিয়ে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের শামীম ওসমানের সাথে ভোটের ময়দানে লড়ার মতো গিয়াসউদ্দিনই একমাত্র যোগ্য বলে মনে করছেন তারা। কেননা গিয়াসউদ্দিনকে দূরে সরিয়ে শাহ আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও সব থেকে বেশি লাভবাবন হবে আওয়ামী লীগ। বরাবরই প্রতিয়মান হয়েছে যে, কল্যাণ পার্টি থেকে দলছুট দিয়ে আসা এই ব্যবাসায়ীর সাথে আওয়ামী লীগের রয়েছে গোপন সখ্যতা। ফলশ্রুতিতে তিনি নমিনেশন পেলে সুবিধাটা আওয়ামী লীগই পাবেন এবং আসনটি পুনরুদ্ধারও সম্ভব হবে না। তাই এই আসনটি পুনরুদ্ধারের জন্য গিয়াসউদ্দিনকেই চাচ্ছে তৃণমূল।
এ প্রসঙ্গে সাবেক সংসদ সসদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, চেষ্টা করবো সোমবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে। যদি এদিন সম্ভব না হয় তবে, মঙ্গলবার কেনবো অবশ্যই। নির্বাচন করার মতো যথাযথ সক্ষমতা আমি রাখছি। দল যদি মনে করেন আমি যোগ্য তাহলে অবশ্যই আমাকে নিরাশ করবেন না। আর দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে সর্বশক্তি নিয়োগ করে বিএনপির এই আসনটি পুনরুদ্ধার করবো আমি।
প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী শামীম ওসমানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
অপরদিকে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে সাংসদ সেলিম ওসমানকে ঠেকানোর জন্য জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হচ্ছে সাবেক সাংসদ এসএম আকরামকে। তিনি নাগরিক ঐক্যের পক্ষে এই জোট থেকে মনোনীত প্রার্থী হবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তবে, নাগরিক ঐক্যের পক্ষে তিনি নির্বাচন করলেও তার প্রতীক ‘ধানের শীষ’ থাকবে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, আগামী ২০ নভেম্বর এ সক্রান্ত ঘোষণা দেওয়া হতে পারে। আর সেটি হলে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে হেভেওয়েট প্রার্থী হিসেবে এসএম আকরামের অভির্ভাব ঘটবে। এই ঐক্যের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন এসএম আকরাম। এর পূর্বে তিনি এই আসনের সংসদ সদস্যও ছিলেন। তবে, এসএম আকরাম প্রশ্নে বিএনপি’রও কোনো ধরণের আপত্তি নেই বলেও শোনা যাচ্ছে। ফলে, তার হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দেওয়া হবে।
এদিকে বর্তমান সাংসদ সেলিম ওসমানের এই আসনে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তিনি উপ নির্বাচনের মাধ্যমে এই আসনে তার বড় ভাই নাসিম ওসমানের পরবর্তীতে নির্বাচন করে জয়ী হন। তার বিপক্ষে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আপাত দৃষ্টিতে এসএম আকরামের বিকল্প আর অন্য কাউকে ভাবতে পারছেন ঐক্য ফ্রন্টসহ বিএনপি। কেননা, এই আসনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জোটের কাছে। এবং সেলিম ওসমানের বিপরীতে লড়ার মতো যথার্থ সমর্থ রয়েছে সাবেক এই সাংসদ এসএম আকরামের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এসএম আকরাম বলেন, আমি নির্বাচন করার জন্য মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত। জোট যদি মনে করে আমি যোগ্য তবে, অবশ্যই আমি পাবো। যদি অন্য কাউকে জোট মনোনীত করে তবে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করে আসনটি আমাদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করবো।