সভা চলাকালে আবারো হট্টগোল, ক্যশিয়ারের ব্যার্থতায় ভোগান্তিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা
নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : শহরের চাষাঢ়ায় নবাব সলিমুল্লাহ রোডস্থ নারায়ণগঞ্জ সিটি হকার্স মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিদ্যুৎ বিলের লোপাট হওয়া প্রায় ৭ লাখ টাকার এখনো হদিস মিলেনি! পরবর্তিতে কমিটি ও ব্যবসায়ীদের সহযোগীতায় সে বিলের কিছুটা পরিশোধ হলেও আবারো বিলের টাকা গরমিলের অভিযোগ উঠেছে কমিটির ক্যশিয়ার মোরশেদের বিরুদ্ধে। এদিকে বিদ্যুৎ বিল না দেয়ায় সোমবার মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছন্ন করে দেয় ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষ।
এরপর এ নিয়ে ওই দিন দুপুরে জরুরী সভা আয়োজন করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ। বিকেল পর্যন্ত চলতে থাকা এই জরুরী সভায় আবারো ব্যপক হট্টগোল ও চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়তে হয় ক্যাশিয়ার মোরশেদ ও কমিটির নেতৃবৃন্দকেও । সভা শুরু হওয়ার পর পরই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা তাদের পরিশোধকৃত বিদ্যুৎ বিল দেয়ার পরেও সংযোগ কেন বিচ্ছন্ন হলো? এমন প্রশ্ন উঠলে ও টাকার হিসাব চাইলে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। এসময় তাদের বার বার থামাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন কমিটির নেতৃবৃন্দ।
চলে বিচ্ছন্নভাবে বাকবিতন্ডা ও বের হয়ে আসে একেঅপরের অভিযোগের পাহাড় পরিমান নানা অনিয়মের তথ্য। পরে কমিটির নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় দু’দিনের মধ্যে ক্যাশিয়ার সংযোগের ব্যবস্থা করবে বলে এমন আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে কমিটির নেতৃবৃন্দ ফান্ডের ৮৪ হাজার টাকা ও নগদ ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়ে ক্যাশিয়ারকে সহযোগীতা করে। যেন দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করা হয়। এসময় সাংবাদ কর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে একাধিকবার হুমকীর ইঙ্গিত দেয়া হয়। এছাড়াও সংবাদটি যেন প্রকাশ না করা হয় এজন্য ম্যানেজ করার চেষ্টা করে কমিটির অসাধু কর্মকর্তা।
এব্যপারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, আমরা প্রতিমাসেই সময়মত বিল পরিশোধ করে থাকি। শুধুমাত্র কমিটির কিছু নেতৃবৃন্দ আছে যারা দেয় না। কিন্তু সিংহভাগ টাকাই তুলে নেয়া হয়। তারপরেও আমাদেরকে কেন বিদ্যুৎ ছাড়[ থাকতে হবে? ক্যাশিয়ার মোরশেদ আমাদের টাকা দিয়ে লাভবান হচ্ছে। আর কষ্ট ভোগ করছি আমরা। এছাড়াও দোকানের সাটার লাগানো সহ বিভিন্ন সময়ই নানা কারণে আমাদের কাছে অধিক টাকা নেয়া হতো।
আরো অভিযোগ রয়েছে, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ যেখানে ৯-১২টাকা সেখানে আমাদের কাছ থেকে কমিটি নিচ্ছে প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা। এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেও কমিটির ফান্ডে আরো টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু কমিটির ফান্ডে টাকা তো দূরের কথা উল্টো কমিটিই বিদ্যুৎ খাতে দেনা রয়েছে প্রায় ৭ লাখ টাকা। আমরা লুটপাটের এ টাকা পয়সার হিসাব চাই। এছাড়াও তারা আরো অভিযোগ করে মার্কেটের বাইরের দিকেও অনেকগুলো দোকান বসানো হয়েছে। ওইসকল দোকানগুলো থেকেও অর্থ পাচ্ছে মার্কেট কমিটি। কিন্তু কোন টাকারই হিসাব নেই।
তবে এব্যাপারে ক্যাশিয়ার মোরশেদ বলেন, আমি কোন টাকা ঋণ নেই নি। কিছু টাকা দিয়ে আজই সংযোগটি আনার চেষ্টা করবো। ব্যবসায়ীরা অনেকেই টাকা দেয় না। আমাদের থেকে র্ভূতুকী দিতে হয়। ৭ লাখ টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিউজ করা লাগবোনা। সন্ধ্যায় আসেন চা পানির ব্যবস্থা করতাসি। নির্বাচনের পরে টাকার হিসাব বুঝিয়ে দিবো।
এ ব্যপারে নারায়ণগঞ্জ সিটি হকার্স মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম জানায়, দোকানদাররা দোষী না। কয়েয়জন কর্মকর্তা যারা দিচ্ছেনা তাদেরকে বলে দেয়া হয়েছে তারাও দিবে। আর ৭ লাখ টাকার হিসাবটা নিয়ে এখন আর বসা হচ্ছে না। যেহেতু এই সপ্তাহে আমাদের নির্বাচন তাই নির্বাচনের পরে আমরা এটা নিয়ে বসবো।
সভায় এসময় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি হকার্স মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ সভাপতি নুরুজ্জামান মুন্সী, সহ সভাপতি হাজী ফরিদ, সহ কোষাধ্যক্ষ মো. মোরশেদ আনিস মোল্লা, ডালিম হোসেন ডালিম, নাজিম, গোলাপ, রিপন সহ মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীবৃন্দ।
উল্লেখ্য এর আগে গত ১ জুলাই রোববার মার্কেটের অভ্যন্তরে একইভাবে জরুরী সভা চলাকালে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কমিটির ব্যপক হট্টগোল ও চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিলো। পরে কমিটির নেতৃবৃন্দ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হিসাব প্রকাশ করার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হরয়ছিলো। যা আদৌ বাস্তবায়ন হয়নি। এরআগেও ৫ লক্ষাধিক টাকার উপরে বিদ্যুতের বিল বকেয়া থাকায় গত ২৪ জুন মার্কেটের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় ডিপিডিসি। পরে কিছু বকেয়া পরিশোধ করে গত ২৭ জুন পুনরায় সংযোগ পায় হকার্স মার্কেটের হকাররা। এভাবেই ধারাবাহিকভাবে প্রায় ৩-৪ বার তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও পূণরায় অদৃশ্য শক্তির কারণে দালাল চক্রের সদস্যরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে দিচ্ছে।