নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( আনীসুল মুরসালীন ) : চৈতালি মৃদু হাওয়ায় স্বআনন্দে হাটতেছি খোলা আকাশের নিচে। অকস্মাৎ অযাচনচিত্তে তাকালাম আকাশ পানে। ও মা ! একি ! তাকাতেই চোখের তারায় অযাচনীয় ভাবে ভেসে উঠল চোখ মোটা ভীষন কালো এক পাখি। আকাশে উড্ডয়মান । যদিও তার নয়ন যুগল ছিল সাধারন চক্ষু অপেক্ষা বৃহদাকারের এবং দেখতেও সে সবার চোখে ছিল কালো ততাপি এই উদাসীন চোখে তাকে দেখা মাত্রই লেগেছিল অগাধ ভালো। তাই দেখেই তাকে শিকার করার আগ্রহ জাগল মনে। জাগলেই কি হয় ? হয়তো অনেক শিকারী ঢিল ছুড়ছে তার পানে। কার ঢিলের শিকার হবে সে কে-ই বা জা
তা ছাড়া হতে পারে কোন শিকারীর খাচায় বন্দী হওয়া পুষা পাখি। বিকাল বেলা মনের আনন্দে একটু ছুটে বেড়াচ্ছে আর কি। এসব ভেবে মনকে প্রভোদ দিলাম অযথা শিকারের ইচ্ছা পোষণ করবি না। মন মেনে নিল আমার জোর পুর্বক সিদ্ধান্ত। চোখকে বললাম তুই ও তাকাবি না কভু পাখির দিকে। অত:পর ভালই কাটছিল দিন কাল। কারণ হাটতে বেরিয়েছি কিন্তু ভ্রমেও তাকাইনি পাখির দিকে।
একদা কোন এক প্রয়োজনে রাতের আধারে সাক্ষাৎ হলো মনচোরা পাখির সাথে। তখন তার ডানার হালকা ছোঁয়া লেগেছিল এই হাতে। এহেন পরিস্থিতিতে কি যে অবস্থা হয়েছিল আমার ! তা আমিই জানি। তখন মনচোরকে মুখ দিয়ে বলেছিলাম কেবল দুটিই বাণী। (এক) পানি নিয়ে এসো (দুই) জগ দিয়ে নিয়ে এসো। এরপর মন খুবই অস্থির হয়ে উঠছিল তাকে দেখার জন্য। কিন্তু চোখকে বললাম মন যাই বলুক তুই ভুলেও দৃষ্টি ফেলবিনা।
পরদিন পাখিটা অন্য এক পাখির সাথে বসাছিল পুকুর পাড়ে গাছের এক মুগডালে। যখন আমি হাটতে বের হলাম এবং হাটতে হাটতে পুকুড়ের কাছে এলাম তখন শুনতে পেলাম পাখির কিচিরমিচির শব্দ। শব্দ শুনতেই চোখদুটি কে আর বারণ করে রাখতে পারলাম না। দৃষ্টি ফেলা মাত্রই দেখি পাখির সাথে সুটামদেহী আরেকটা পাখি। আমাকে দেখে তাদের কিচিরমিচির আরো শত গুন বেড়ে গেল। ভাবলাম উভয়টি পরস্পর বান্দবী হবে।উভয়ের মাঝে কি একটা কানাঘুশি চলছে। তখন মনোহরনী পাখির মায়াবী দৃষ্টির চাহনিতে আমার অন্তর বিমোহিত হয়ে উঠছিল। আমি অনন্যসাধারন মুগ্ধ দৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম অল্পদূরে মুগডালে বসা মনচোরা পাখির পানে। মনোযুদ্ধে আমি পরাজিত হয়ে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম পাখিটাকে শিকার করবই। কিন্তু কিভাবে শিকার করব সে পথ খুজে পাচ্ছিলাম না। হাত দিয়ে তো ধরা যাবে না তাই স্থির করলাম ঢিল ছুড়ে শিকার করব। ভাবানুযায়ী একটা ঢিল বানালাম তাকে ছুড়ব বলে। ঢিলটা ছুড়বো এমন সময় ভাবলাম যদি আমার ঢিল তার গায়ে না বেধে অন্যত্র চলে যায় তাহলে তো সে বুঝে ফেলবে আমি তার পানে ঢিল ছুড়ছি। হয়তো এরপর থেকে সে আমার আকাশে আর উড়বেনা। আর না উড়লে দেখতেও পাবো না। তাই ঢিলটা ছুড়লাম না।
রাতে যবে ঘুমাতে যাবো তখন মন বলল ঐ ভিতু শুন, যে যাকে চায় সে তাকে পায়। সুতরাং ট্রাই করে দেখ কি হয়। চেষ্টাই সফলতার চাবি। মনের এহেন কথাবার্তা শুনে আবার উদ্যত হলাম শিকার করতে। নতুন করে আরেকটা ঢিল তৈরি করলাম। কিন্তু এবার আর ছুড়ার সুযোগ হল না। এবং সে দেয় নি ছুড়তে।
একদিন জানতে পারলাম কি যেন একটা শব্দ আছে যে শব্দে তাকে ডাকলে ভীষন রাগান্বিত হয়। ভাবলাম সে শব্দে তাকে একদিন ডাকব। হয়তো রেগে গিয়ে কিচিরমিচির করে কিছু বলবে। তবুও তো বলবে। এ আশায় একদিন তার সামনে গিয়ে শব্দটা উচ্চারণ করলাম। দেখি ক্রোধান্বিত হয়ে চোখ দুটি বড় বড় করে এমন অপলক দৃষ্টে তাকিয়েছে যেন তার ধারালো দুই ঠোট দ্বারা ঠুকরিয়ে ঠুকরিয়ে খেয়ে ফেলবে। ভয়ে আর দাড়ালাম না। পলাতক শেয়ালের মত লেজ ঘুঠিয়ে চলে আসলাম। ভাবছিলাম শব্দটা বলার পর রেগে গিয়ে কিছু বলবে কিন্তু ব্যপারটা ধারনার উল্টো হয়ে গেল। এরপর থেকে আমাকে দেখলেই সে কিচিরমিচির বাদ দিয়ে অন্যত্র চলে যায়।পাখিটা যে রাগ করেছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইল না। এবং তার চালচলনে এটাও বুঝতে বাকি রইল না যে পাখিটাও ধরা দিতে চায়। অনেক অভিমান তার আমার উপর। খুবই চিন্তিত হলাম কিভাবে তার অভিমানী হৃদয়ের সব অভিমান দূর করব। কোন পথ খুজে পাচ্ছি না।
হঠাৎ মাথায় একটা চাল আসলো। আর সেটা হল তাকে খুশি করার জন্য এবং শিকার করার জন্য একটা ফাঁদ পাতবো। হয়তো ফাঁদে পাখিটা আটকা পড়বে আর আটকা পড়লে বুঝিয়ে সুঝিয়ে খুশি করতে পারব। তাবৎ জৌলুসে রাতের আধারে অক্লান্ত চেষ্টায় মোবাইলের নিবিনিবি আলোতে একটা ফাঁদ তৈরি করলাম।
পরদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। বাংলা নব বর্ষের প্রথম দিন। রঙ মাখা এই দিনে বাংলার চতুরপার্শ আনন্দে কানায় কানায় টইটুম্বুর হয়ে আছে। বাংলা মায়ের মুখে নববর্ষের নবহাসির ঝিলিক উদ্বেলিত হচ্ছে। প্রকৃতির খুশলগ্নে উদ্যমী হলাম ফাঁদ পাতার জন্য। ফাঁদটা রাখার জন্য গেলাম পাখির বিচরন ক্ষেত্রে। কেউ যেন না দেখে তাই অনেক কষ্টে চুপিসারে এক জায়গায় রেখে আসলাম।
চুপিসারে রেখেছিলাম যেন কেউ না দেখে। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস সত্যিই আজ পর্যন্ত কেউ সেটাকে দেখলনা। এমনকি পাখিটাও না। যেথায় রেখেছিলাম সেথায়ই পড়ে আছে। অত:পর পারলাম না পাখিকে খাচায় বন্দী করতে।