নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআর সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ইউএনএইচসিআরের মহাপরিচালক ফিলিপো গ্র্যান্ডি এই সমঝোতা স্মারকে সই করেন।
ইউএনএইচসিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত আট মাস ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করতে একটি ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। তাতে সম্মতি জানিয়েই সই হয়েছে সমঝোতা স্মারক।
সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে আসা চার লাখের মত রোহিঙ্গা গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে আছে। গতবছর ২৫ অগাস্ট রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরুর পর রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে আরও প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা।
জাতিসংঘ ওই অভিযানকে জাতিগত নির্মূল অভিযান বলে আসছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রোহিঙ্গা সঙ্কটকে এশিয়ার এ অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে বড় শরণার্থী সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সঙ্কটের শুরু থেকেই এই শরণার্থীদের জরুরি সহায়তা ও সুরক্ষা দিয়ে আসায় বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ইউএনএইচসিআরের মধ্যে একক কোনো ত্রিপক্ষীয় চুক্তি না থাকায় জাতিসংঘের এই সংস্থা দুই দেশের সঙ্গেই আলাদা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের সঙ্গে যে সম্মতিপত্র সই হয়েছিল, সেখানে দুই মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করার লক্ষ্য ঠিক করেছিল দুই দেশ।
ওই সম্মতিপত্রের ভিত্তিতে দুই দেশ গত ১৯ ডিসেম্বর যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করে এবং ১৬ জানুয়ারি ওই গ্রুপের প্রথম বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিভিন্ন বিষয় ঠিক করে ‘ফিজিক্যাল অ্যারেঞ্জমেন্ট’ স্বাক্ষরিত হয়।
রোহিঙ্গাদের পরিচয় যাচাইয়ের জন্য একটি ফরমও চূড়ান্ত করা হয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে। ঠিক হয়, পরিচয় যাচাই ও প্রত্যাবাসনের কাজটি করা হবে প্রতিটি পরিবারকে একটি ইউনিট ধরে।
চুক্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর জন্য সীমান্তে পাঁচটি ট্রানজিট ক্যাম্প খুলবে বাংলাদেশ। সেখান থেকে তাদের নিয়ে প্রাথমিকভাবে রাখা হবে মিয়ানমারের দুটি ক্যাম্পে। পরে সাময়িকভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা হবে হ্লা পো কুংয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে। পাশাপাশি ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ভিটামাটিতে দ্রুততার সঙ্গে বাড়িঘর পুননির্মাণের ব্যবস্থা নেবে মিয়ানমার।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রাথমিক চুক্তিতে জাতিসংঘকে না রাখায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে সমালোচনা করা হয়।
জাতিসংঘ মহাসিচব গুতেরেসও সে সময় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয় সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে সঙ্গে রাখা জরুরি ছিল বলে তিনি মনে করেন।