নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( স্টাফ রিপোর্টার ) : ফতুল্লায় দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ফতুল্লা মডেল থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেছে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষক। তবে শিক্ষিকা শানুকে লাঞ্ছিতকারী অভিযুক্ত এড.মজিদ খোন্দকার আটক হলেও জুতাপেটা করা তার স্ত্রী রোকেয়া খোন্দকার এবং গৃহশিক্ষক জনিকে পিটিয়ে আহত করা শিক্ষার্থী ও পরিবারের লোকজন এখনও অধরা রয়েছে। জানা গেছে, বেতনের পাওনা টাকা চাওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে গৃহশিক্ষক মোহাম্মাদুল্লাহ কবির জনি (২৫) কে পাচঁ ঘন্টা বাসায় আটক রেখে পিটিয়েছে শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের লোকজন। শুক্রবার রাতে মধ্য সস্তাপুর এলাকাস্থ কমর আলী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মো: শারে আলমের নিজ বাসভবনে এ ঘটনা ঘটে।
গত ৯ বছর যাবত উল্লেখিত বাড়ির মালিক মো: শারে আলমের দুই ছেলেকে ৩ হাজার টাকা মাসিক বেতনে পড়াতো গৃহশিক্ষক মোহাম্মাদুল্লাহ কবির জনি। তবে ৫ মাস ধরে বকেয়া বেতন দেই দিচ্ছি বলে তা দিচ্ছেন না মো: শারে আলম ও তার স্ত্রী মমিনা বেগম। এজন্য প্রায়শই বেতনের টাকা দেয়ার জন্য অনুরোধ করছে বলে জানায় গৃহশিক্ষক জনি।
এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাত ৮টায় মধ্য সস্তাপুরের বাসায় গেলে সোহানকে পড়াতে থাকে গৃহশিক্ষক জনি। কিছুক্ষণ পরই শারে আলম (৪৩), পিতা মৃত. কাজিম আলী প্রধান, স্ত্রী মোমেনা বেগম (৪০), ছোট ছেলে সোহান(১৮), মোমেনা বেগমের উকিল বাবা জনি (৩৬) পিতাঃ সিরাজুল, ইন্না (৩২) নজরুল (৪০), বড় ছেলে মিথুন (২১) সহ আরো চার থেকে পাচঁজন অজ্ঞাত ব্যক্তি চোখে কাপড় বেঁেধ মারধর করে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেয়। রাত ১টা র্পযন্ত মারধর চলাকালীন সময় চোখের কাপড় খোললে সোহানের মামা নজরুল মোবাইল ফোন দিয়ে তার ভিডিও ধারন করে এবং তা সবজায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে গৃহশিক্ষকের জীবন শেষ করে দিবে বলে হুমকি দিয়েছে বলে গৃহশিক্ষক জনি জানায়। পরে তার বড় ভাই খোজঁ নিতে উল্লেখিত বাসায় এসে সাংবাদিক ও পুলিশের সহায়তায় গৃহশিক্ষক জনিকে উদ্ধার করে। পরে চিকিৎসার জন্য খানপুর ৩ শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়। এরপর বড় ভাই আব্দুল্লাহ রনি বাদি হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে।
এদিকে, ফতুল্লা নিউ হাজিগঞ্জ এলাকাস্থ প্যাসিফিক ইন্টার ন্যাশনাল স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা শাহিনুর শারমিন শানু (৩৫) কে লাঞ্ছনার ঘটনায় জেলা আদালতের আইনজীবী ও জাতিয় পার্টির সদস্য সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল মজিদ খোন্দকারকে আটক করা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি ফতুল্লা মডেল থানায় আটক রয়েছে।
এ ব্যপারে লাঞ্ছিত শিক্ষিকা শাহিনুর পারভিন শানু জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী বাসিন্দা জাতীয় পার্টির নেতা ও আইনজীবি আবদুল মজিদ খোন্দকার রোববার রাত সাড়ে ৭টায় দিকে তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসায় এসে তাদের নাতীকে বাসায় গিয়ে পড়ানোর প্রস্তাব দেন। দীর্ঘ ছয় মাস যাবত কিডনীজনিত রোগে অসুস্থতার কারণে তাদের এ প্রস্তাবে আমি রাজি হয়নি।
একারনে আইনজীবি ও তার স্ত্রী প্রথমে তাকে মৌখিকভাবে হুমকি দেন এবং এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে নাবালক ছেলে-মেয়ে ও স্বজনদের সামনেই আমাকে মারধর করে। আবদুল মজিদ খোন্দকার এর স্ত্রী রোকেয়া খোন্দকার পায়ের জুতা খুলে জুতাপেটা করে কিন্তু এসময় মজিদ খোন্দকার দাড়িয়ে থাকে কিন্তু থামানোর চেষ্টাও করেনি।
ঘটনার পর পরিবারের স্বজনরা শিক্ষিকা শাহীনুর পারভীনকে গুরুতর আহত অবস্থায় নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর ৩শত শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. তাহমিনা নাজনীন জানান, শাহীনুরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার আলামত পাওয়া গেছে।
এদিকে স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তির সাথে কথা বললে জান যায়, এড. মজিদ খোন্দকার কখনই মানুষের সাথে ভালো আচরণ করেন না। তিনি একজন আইনজীবী বিধায় সবসময়ই দাম্ভিকতা দেখায়। কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে তাকে মারধর করতে উদ্যত হয়।
প্রসঙ্গত, আটকের আগমুহুর্তে সাংবাদিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার বক্তব্য জানতে চাইলে এসময় সাংবাদিকের সাথেও অশোভন আচরণ করেন।
এঘটনায় লাঞ্ছনার শিকার শাহীনুর পারভীনের পিতা সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে আবদুল মজিদ খন্দকার ও তার স্ত্রী রোকেয়া খন্দকারকে বিবাদী করে ফতুল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন।