নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( প্রেস বিজ্ঞপ্তি ) : বন্দর থেকে মাদক নির্মূলে লাঠি হাতে এলাকার মুরুব্বিদের রাস্তায় নামার পাশাপাশি মসজিদের ইমামদের দায়িত্ব নেওয়ার আহবান রেখেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। মাদকসেবীদের আগে মাদক ব্যবসায়ী এবং তাদের সাথে কিছু হুমরা চুমরা নেতাদের শায়েস্তা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
১৮ অক্টোবর মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় বন্দর উপজেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গনে বন্দরের উন্নয়নে উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে মত বিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বন্দর উপজেলার নির্বার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী হাবিব এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নব নিযুক্ত নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া, পুলিশ সুপার মঈনুল হক, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক আবুল জাহের, বন্দর থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম এ রশিদ,বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল, মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানাউল্লাহ সানু।
সেলিম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ ছিল প্রাচ্যেরডান্ডি। যা কিনা বন্দর বেষ্টিত ছিল। বন্দরের মানুষ মাদক সেবন করবে বা মাদক বিক্রি করবে তা কেউ স্বপ্নেও চিন্তা করেনি। কিন্তু একটি সরকার নারায়ণগঞ্জের বড় বড় শিল্প কারখানা গুলো একে একে গলাটিপে হত্যা করেছে। ঐ সকল কারখানা গুলোতে লাখ লাখ শ্রমিক কাজ করতো। তাদের সন্তানেরা লেখাপড়া করতো। কিন্তু মিল গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ঐ সকল শ্রমিকদের সন্তানদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এরপর শুরু হয় পেশি শক্তির রাজনীতি ঐ সকল শ্রমিকদের পেশি শক্তির রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়েছে। একটা সময় পেশি শক্তির রাজনীতি থেকে তাদের হাতে মাদক তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বন্দরের মানুষ মাদক বিক্রি করছে এবং বন্দরের মানুষ মাদকে আকৃষ্ট হচ্ছে।
বন্দর থেকে মাদক নির্মূলে তিনি সকলের সম্মিলিত সহযোগীতা কামনা করে বলেন, মাদক বন্ধ করতে এলাকার ছেলেদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদেরকে খেলাধূলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিনোদনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাহলে দেখা যাবে আর কেউ মাদকে আকৃষ্ট হবে না। সেই সাথে এলাকার রাস্তাঘাটে মাদক সেবন বন্ধ করতে লাঠি হাতে এলাকার মুরুব্বিদের রাস্তায় নামতে হবে। পাশাপাশি প্রতিটি মসজিদের ইমামদের জুম্মার খুতবা বা নামাজের বয়ানে মাদকের কুফল সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করতে হবে। তাহলে দেখা যাবে বন্দর থেকে মাদক নির্মূল করা খুব সহজেই সম্ভব হবে।
স্থানীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান রেখে তিনি বলেন, মাদকসেবীদের আগে মাদক বিক্রেতাদের শায়েস্তা করতে হবে। দেখা যায় এলাকার কিছু হুমরা চুমরা নেতারা মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিয়ে থাকে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার সহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ওসিরা মাদকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। আমি বন্দরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ সকল জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহবান রাখবো মাদক সংক্রান্ত কোন অপরাধীকে ছাড়িয়ে আনতে আপনারা কোন প্রকার তদবির করবেন না।
সেলিম ওসমান তার স্বপ্নের কথা এবং তা আগামী দুই বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের আশা প্রকাশ করে বলেন, আমি স্বপ্ন দেখি শীতলক্ষ্যা নদীর উপর দিয়ে মদনগঞ্জ এবং নবীগঞ্জ খেয়াঘাট দিয়ে পূর্ণাঙ্গ দুইটি সেতু, শান্তিরচরে নীটপল্লীর বাস্তবায়ন, প্রতিটি ওয়ার্ড এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে উন্নত সুশিক্ষা এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা বাস্তবায়ন। আমি হয়তো আর মাত্র দুই থেকে আড়াই বছর সময় পাবো। গত দুই বছর আপনারা দলমত নির্বিশেষে যেভাবে বন্দরের উন্নয়নে একত্রিত হয়ে কাজ করেছেন ঠিক সেই ভাবে আগামী দুই বছর আপনারা একত্রিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। আপনাদেরকে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কোন রাজনীতি নয়।
নিজেকে কৃষক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ব করার কথা বলে তিনি বলেন, আমি আমার কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৩৫ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে থাকি। এরপর আমি নিজেকে একজন কৃষক হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। প্রতিদিন সকালে আমি ৭০ হাজার টাকার দুধ বিক্রি করতে না পারলে আমার দিন ভাল যায় না। তাই আমি চাই বন্দরের প্রতিটি পুরুষ নিজেকে একজন কৃষক হিসেবে গড়ে তুলুক। সেটা গরু, ছাগল, হাঁস মুরগি পালন করে হোক, জমি চাষ করে হোক আর অন্যের জমি বরগা চাষ করেই হোক। আমি আমার কৃষি কাজ থেকে উপার্জিত আয় দিয়ে বন্দরের মানুষের উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকি এবং আমি আমার এই উপার্জনের অর্থ বন্দরের প্রতিটি অলিগলিতে ছড়িয়ে দিবো।
মত বিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করর্পোরেশনের কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, ফয়সাল সাগর, মোহাম্মদ হোসেন, ইফাত জাহান মায়া, রেজওয়ানা হক সুমি, গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওশেদ আলী, আলীরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, বন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এহসান উদ্দিন, মুছাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, মদনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ সালাম সহ আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা।