বাস ভাঙচুর, চালককেও মারলেন বিএনপি নেতা ইকবাল

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও তার অনুসারী কর্মীদের বিরুদ্ধে একটি বাস ভাঙচুর ও চালককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার প্রতিবাদ জানালে এক যাত্রীকেও মারধর করা হয়। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড় এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

মারধরের শিকার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করা এসি-বাস ‘আসিয়ান’র চালক মো. নয়ন স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
নয়ন সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার গুলিস্থান থেকে ছেড়ে আসা বাসটির যাত্রী ছিলেন ইকবাল হোসেন। তবে তাকে চিনতেন না ওই চালক।

সড়কে যানজট থাকার কারণে ঘন ঘন ব্রেক কষায় যাত্রীরা বিরক্ত হচ্ছিলেন। আমার তো কিছু করার ছিল না। কিন্তু আমাকে ওই নেতা ধমক দিতে থাকেন। আমিও পাল্টা উত্তর দিলে সে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। গাড়ি যখন সানারপাড় আসে তখন ২৫-৩০ জন কর্মী এসে গাড়ি ভাঙচুর করে ও আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমি তখন হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে আমাকে ছেড়ে দেয়। যাবার আগে তার একটা ভিজিটিং কার্ডও আমার হাতে ধরিয়ে দেয়।”
ওই বাসেই নারায়ণগঞ্জ ফিরছিলেন ফতুল্লার বাসিন্দা মিনহাজ আমান। বাস ভাঙচুর ও চালককে মারধরের ঘটনার প্রতিবাদ জানালে তাকেও চর-থাপ্পর দেয় ওই বিএনপি নেতার লোকজন।

বারবার ব্রেক কষায় সব যাত্রীরাই বিরক্ত ছিল। কিন্তু আমি শুধু বলেছি, এইভাবে গাড়ি ভাঙচুর করা ও মারধর করাটা আপনার (ইকবাল) ঠিক হয়নি। এই কথা বলায় তার লোকজন আমাকেও চর-থাপ্পর মারে, বলেন আমান।

অভিযুক্ত ইকবাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে তার মুঠোফোনের নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে, একটি গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, “গাড়ির ড্রাইভার বাজে আচরণ করেছে। ওরে ভালোভাবে গাড়ি চালাতে বলায় আমাকে বলে ‘আপনে গাড়ি চালান’। আমি বলছি, ‘সাইনবোর্ড রাখ তোর ব্যবস্থা নিচ্ছি’। ও আমাকে বলে, ‘এমন ফাপড় অনেকেই দেয়’। আমার চিন্তা ছিল কান ধরিয়ে ছেড়ে দিবো। কিন্তু পাবলিক তো আর এটা বুঝে না।

বাস মালিক সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট শিক্ষার্থী-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে দীর্ঘ বিরতির পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আসিয়ান বাস চলাচল শুরু করেছে। পরিবহনটি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা।

এই পরিবহনের মালিকানার সাথে আছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফতেহ মোহাম্মদ রেজা রিপন। যদিও এই ঘটনার বিষয়ে তিনি অবগত নন বলে জানান।

যদিও, বাস মালিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিজেদের মধ্যে আপোস-মিমাংসার প্রক্রিয়া চলছে।

যোগাযোগ করা হলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনূর আলম বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি অন্য মাধ্যমে। ভুক্তভোগী বা বাস মালিকপক্ষ থেকে কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন। তিনি ফেসবুক পোস্টে বলেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় মিনহাজ আমান এর উপর হামলা করছে বিএনপির ছেলেরা। সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপি সেক্রেটারি ইকবাল হোসেনের কর্মীরা তার সামনেই হামলা করে। ইকবাল ভাই, গুন্ডামিকে আশ্রয় কইরেন না। মানুষ আওয়ামী লীগকে গালি দেয় তাদের জুলুমের জন্য। এমনিতেই জুলাইয়ের পরে আপনাদের অনেক বদনাম নারায়ণগঞ্জে। সন্ত্রাস, দুর্বৃত্তপনা চর্চায় বিএনপি আরেক আওয়ামী লীগ হোক আমরা এটা চাই না। আমরা শান্তি, সৌহার্দ্য, গুন্ডামি-মুক্ত দেশ চাই।

add-content

আরও খবর

পঠিত