শামীম ওসমানের দুবাই-কানাডায় বাড়ি, দ্বৈত নাগরিকত্বে এমপি

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান। আওয়ামী লীগের এই নেতার কানাডিয়ান নাগরিকত্ব থাকা সত্ত্বেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ শাসনামলে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া সাবেক এই সংসদ সদস্য কানাডার পাশাপাশি দুবাইতেও বানিয়েছেন বাড়ি।

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এক তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো এ বিষয়ে একটি সংবাদও প্রকাশ করেছে। যাতে শামীম ওসমান ছাড়াও আওয়ামী লীগের কয়েকজন মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দ্বৈত নাগরিকত্ব ও প্রবাসে সম্পদ গড়ে তোলার বিষয়টি উঠে এসেছে।

যদিও, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে বিগত সরকারের টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

দুদকের অনুসন্ধানে কানাডার টরন্টো শহরে শামীম ওসমানের বাড়ি রয়েছে বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া দুবাইয়ের আজমান শহরে তাঁর আরেকটি বাড়ি রয়েছে। ২০০১ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হলে নির্বাচনের রাতেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে কানাডায় যান শামীম ওসমান।

তবে, এবার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের সরকারের পতনের পর ভারত হয়ে দুবাইয়ের আজমান শহরে অবস্থান করছেন শামীম ওসমান। এমন তথ্য বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকারীদের উপর প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান ও তার অনুসারী আওয়ামীলীগের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনকারীদের দমাতে ১৯ জুলাই দুপুরে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে সড়কে নেমে আসেন সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। দিনভর নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের এক মাথা থেকে অন্য মাথা এবং জালকুড়ি এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সংযোগ সড়কে (লিংক রোড) আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু গুলি ছোড়েন শামীম ওসমান ও তার লোকজন।
তাদের গুলিতে সেদিন ৬ বছরের শিশু রিয়া গোপ সহ অনেক প্রাণহানির অভিযোগ উঠে।

এদিকে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে সংসদ সদস্য ও বিদেশে টাকা পাচারের ঘটনায় শামীম ওসমানের শাস্তি চেয়েছেন নারায়ণগঞ্জের নাগরিক সমাজ।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বাক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, ‘ওসমান পরিবারের সদস্যরা হত্যা, চাঁদাবাজি, ভূমি দস্যুতাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেননি। তাদের সরাসরি আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। বিভিন সেক্টর থেকে শামীম ওসমান যে টাকা কামিয়েছেন তা বিদেশে পাচার করেছেন। নারায়ণগঞ্জবাসীকে লুণ্ঠন করে নামে-বেনামে দেশ ও দেশের বাহিরে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তার বিদেশে টাকা পাচার ও বিদেশে সম্পদের বিষয়ে আমাদের অভিযোগ দুদকের অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে। ওসমান পরিবারের বিদেশে পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনা ও দেশে থাকা তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, শামীম ওসমানদের ভিওআইপি ব্যবসা, ৩০৪ কোটি আত্মসাৎ করেছে। তাদের পাঁচটা শিপ সাগরে। এসব তথ্য আমরা দুদককে বহু আগেই জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা কখনই এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়নি, এমনকি তদন্তও করেনি। দুদক রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। আমরা এর নিন্দা জানাই। একই সাথে কানাডার নাগরিকত্ব থাকার পরও সংসদ সদস্য হওয়া সরাসরি সংবিধানবিরোধী কর্মকাণ্ড। এই ঘটনায় শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নিতে হবে একইসাথে এর যে অনুমোদন দিয়েছে সেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এবং দেশের বাইরে তারা যে সম্পদ গড়েছেন তা বিক্রি করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করারও ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

add-content

আরও খবর

পঠিত