নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( সৈয়দ সিফাত লিংকন ) : শুরু হয়ে গেছে তুমুল প্রতিযোগিতা। চলছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে জোড় তদবীর। কে হবে সভাপতি আর কে হবে সাধারণ সম্পাদক! কিংবা সামনের দিনগুলোতে কোন পদে অধিষ্ট হচ্ছেন নেতারা। এ নিয়ে জটিল সমিকরণ মিলাতে তৃণমূলেও নানা ভাবনা। আজ (২৩ অক্টোবর) সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে বেড়েছে ব্যপক উৎসাহ ও উদ্দিপনা। আর নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগে বইতে শুরু করেছে সু বাতাস।
কারণ দীর্ঘদিন পর হলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারিত হয়েছে। উভয় কমিটির বর্ধিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামীলীগ এবং ২৫ অক্টোবর মহানগর আওয়ামীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইতমধ্যে সম্মেলনকে সফল করতে উভয় কমিটির নেতারাই মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। অনেকই আবার শীতল ভালবাসায় গুচিয়ে নিয়েছেন বিগত দিনের সকল তিক্ত সম্পর্কও! তাছাড়া সম্মেলন বাস্তবায়ন করতে চালাচ্ছেন নানা কর্মকান্ড। আর এই সম্মেলনকে ঘিরেই নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন ব্যপক প্রত্যাশ্যা।
জানা গেছে, দীর্ঘ ত্যাগ তিতিক্ষা, মিছিল-মিটিং আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। দলকে সুসংগঠিত রাখতে কর্মী-সমর্থকদের নেতৃত্ব দিয়ে পাশে থেকেই রাজনীতির মাঠে ঘাম ঝড়িয়েছে। এমন কর্মীবান্ধব নেতাদেরকে চায় তৃণমূল। আর তৃণমূলের ভাবনাকে মূল্যায়ন করেই আসবে এবারের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের কমিটির নেতৃত্ব।
এরইমধ্যে, যে যার যার অবস্থান থেকে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে শীর্ষ দুই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সমর্থন আদায়ের চেষ্টা শুরু করেছেন। গোয়েন্দা সংস্থা এবং আওয়ামীলীগের নিজস্ব অনুসন্ধান টিমও আগ্রহী নেতাদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ সম্পন্ন করেছেন। তবে চূড়ান্ত ফলাফলে আসার ব্যাপারটি সম্মেলনের আগে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেন না। তাছাড়া জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহী নেতৃবৃন্দ তাদের অবস্থান আগেই কেন্দ্রে পরিষ্কার করেছেন বলেও দলটির সূত্র জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হলে এবার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি প্রত্যাশা করে বর্তমান জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আরজু রহমান ভূঁইয়া জানায়, আমার দীর্ঘদিনে রাজনৈতিক পরিক্রমা রয়েছে। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ ছাত্র রাজনীতি করেছি। তোলারাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি ছিলাম। আমি ১৯৮৪ সালে বন্দর থানা আওয়ামীলীগরে সাধারণ সস্পাদক ও ১৯৯২তে সভাপতি হই। পরে ১৯৮৬ সালে জেলা আওয়মীলীগের সমাজ কল্যান সম্পাদক, ৯২ তে যুগ্ম সম্পাদক হই। এরপর ৯৭ তে সাধারণ সম্পাদকের প্রতিদ্বন্দ্বি করেছিলাম। কিন্তু শামীম ওসমানর অনুরোধে সরে দাড়াই। এটাই আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। তারপরেও রাজনীতির মাঠে এখনো দায়িত্ব পালন করেছি। আমি ৯০ সনে নির্বাচন করেছি। সকল আন্দোলন সংগ্রামে আমি ছিলাম। এখনো আছি। সাথে ছিল আনোয়র ভাই, শামীম ওসমান, চন্দনশীল। এখন নেত্রী যদি মনে করেন তাহলে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করবেন। এটাতো আমি এবার আশা করি নেত্রী আমাকে মনোনিত কররে। আমি ভালো কার্যকর্ম করবো। আর এসব কিছুই নেত্রীর উপরই নির্ভর করে।
জেলা আওয়ামীলীগে সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশিত গুঞ্জনের বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু বলেন, আমার প্রত্যাশা সুন্দর সম্মেলন হোক। এর মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব চলে আসুক। নেত্রী যাদের পছন্দ করেন, যাদের দিয়ে তৃণমূল সংগঠিত হবে, যাদের হাত ধরে দল আগাবে। তারাই আসুক। সামনেই নির্বাচন যেন, পাঁচটি আসনে নৌকা জয়ী করতে পারে এমন নেতৃত্ব চাই । আর নেত্রী সবই জানে। আর আমি একটা ক্ষুদ্র কর্মী আমাকে যেখানে দিবে, সেখানে থেকেই দায়িত্ব পালন করবো।
মহানগর আওয়ামীলীগের কমটিতে সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশিত বর্তমান কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত বলেন, আমি ছাত্র রাজনীতি থেকে মাঠে সক্রিয় আছি। সকল কিছু নেত্রীর হাতে। তিনি যা দিবেন তাই হবে। তবে আমি ৯০ ভাগ আশাবাদী নেত্রী আমাকেই সাধারণ সম্পাদক মনোনিত করবেন। সম্মেলনকে ঘিরে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা সম্মেলনকে সফল করতে কাজ করছি। আশা করি সুন্দর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে, দিন যতেই যাচ্ছে নেতা হওয়ার আগ্রহী ব্যক্তিদের সংখ্যা যেন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আসতে আগ্রহী এক ঝাঁক নেতা। খোকন সাহা যেমন চাইছেন সভাপতি হবে, তেমনি আনোয়ার হোসেনও চাইছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আবারো থাকতে। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহী বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, জিএম আরমান, আহসান হাবীব, সাংগঠনিক সম্পাদক জিএম আরাফাত। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এহসানুল হক নিপুকেও দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছে সূত্র।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যেও চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন। কেননা, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। তাছাড়া বহু আন্দোলন সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়ার কারণে নারায়ণগঞ্জ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটির শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ চূড়ান্ত করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী নিজেই।
পাশাপাশি জেলা আওয়ামীলীগে ব্যপক সম্ভাবনায় কর্মীসর্মথকদের মধ্যে সভাপতি হিসেবে নাম উঠছে দুই মেরুর নেতাকে। যাদের একজন সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও অপরজন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশেন মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। যদিও উভয় বলয়ে বিভক্ত এটা কেন্দ্রও অবগত আছেন। তবে দুই মহল থেকেই কমিটির পরিবর্তন চায় বলে সূত্র জানায়। তবে জনপ্রতিনিধির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের মাঝে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আসবে কিনা সেটিও ভেবে দেখা হবে বলে জানা গেছে। তবে আসতে আগ্রহী কিংবা স্থানীয় নেতাদের সুপারিশেই যে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্ধারণ করা হবে বিষয়টি এমনও নয়। এসব পদে যারা আসবেন তাদের সকল কিছু বিবেচনা এবং গ্রহণযোগ্যতা যাচাঁই বাঁছাইয়ের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই হবে চূড়ান্ত।