ঈদ যাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩৯৮, আহত ৭৭৪

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : ঈদ উল আজহার যাত্রাপথে ৩ থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনে সড়ক-মহাসড়কে ৩১৯ দুর্ঘটনায় ৩৯৮ জন নিহত ও ৭৭৪ জন আহত হয়েছেন। রেল ও নৌপথ মিলিয়ে ৩৫৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৪০ জন ও আহত হয়েছেন ৭৯১ জন।

এর মধ্যে রেলপথে ২৫ দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ২ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১০ দুর্ঘটনায় নিহত ১৭ জন ও আহত হয়েছেন ১৫ জন এবং ৩ জন নিখোঁজ হয়েছিলেন। গত ৭  বছরের ঈদ উল আজহার তুলনায় এবার সড়কে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে।

১৯ জুলাই মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

মোজাম্মেল হক বলেন, এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটর সাইকেল। এবারের ঈদে ১১৩ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৩১ জন নিহত, ৬৮ জন আহত হয়েছেন। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, নিহতের ৩২ দশমিক ৯১ শতাংশ। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে ১৫৭ জনই চালক। এ ১৫৭ চালকের মধ্যে ১২৪ জন নিহত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, সংঘঠিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে মোট যানবাহনের ২৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ মোটরসাইকেল, ২৩ দশমিক ১৮ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ৫ দশমিক ৬২ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ, ৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ নছিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা, ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ অটোরিকশা, ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল ও ১৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ বাস।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, লকডাউনের কারণে গত ঈদ উল আজহায় মানুষের যাতায়াত সীমিত ছিল। কিন্তু এবারের ঈদে করোনা পরিস্থিতি শিথিল থাকায় মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। এবারের ঈদে ঢাকা ছেড়েছেন ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। এক জেলা থেকে অপর জেলায় আরও প্রায় ৪ কোটি মানুষের যাতায়াত করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ঈদ যাত্রায় মোটর সাইকেলে যাতায়েত বন্ধ করার সুযোগে এবারের ঈদে গণপরিবহনে সবচেয়ে বেশি ভাড়া নৈরাজ্য হয়েছে। এছাড়া নানান অব্যবস্থাপনার কারণে বিভিন্ন রুটে ৪ ঘণ্টার যাত্রা ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টাও লেগেছে। পথে পথে যাত্রী হয়রানি ও ভাড়া নৈরাজ্যের পাশাপাশি ফিটনেসবিহীন বাসের পাশাপাশি ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, মুরগিবাহী পিকআপভ্যানেও সাধারণ মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা গেছে। বরাবরের মতো ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়, টিকিট কালোবাজারি, টিকিট পেতে বিড়ম্বনাসহ নানান ভোগান্তি রেল যাত্রীদের পিছু লেগেই ছিল। পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী সংকটে দেশের বিভিন্ন নৌপথে ভাড়া কমানো হলেও ঈদ যাত্রায় টিকিট কালোবাজারি, ভাড়া নৈরাজ্য নৌপথের যাত্রীদের আগের মতোই ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এবং সেইফ রোড অ্যান্ড ট্রান্সর্পোট অ্যালায়েন্সের (শ্রোতা) সভাপতি ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, নানা ধরনের উদ্যোগের ফলেও সড়ক দুর্ঘটনা ঊর্ধ্বমুখী। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে সড়ক নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম একটি মানবিক বিপর্যয়। আমরা বন্যা প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে বলি। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে তেমন কিছু করছি না। কিন্তু এর ভয়াবহতা ও ব্যাপকতা বেড়েই চলেছে। মুন্সীগঞ্জে বাচ্চর ঘটনায় সেই ভয়াবহতা দেখেছেন। এই জায়গায় আমাদের বড় ধরনের উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে।

অব্যাহত অচল অবস্থা চারটি মূল ঘাটতির কারণে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা, পরিবহন খাতের ভারসাম্যহীন বিস্তার, জনস্বার্থের বিপরীতে গোষ্ঠীর স্বার্থ পরিবহন খাতে এক ধরনের রাজনৈতিক আনুকূল্য পাওয়া এবং নাগরিক উদ্যোগ গুলোর ও সার্বিকভাবে একটি গতির ঘাটতি রয়েছে বলেই সড়ক দুর্ঘটনা অব্যাহতভাবেই বাড়ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ সড়ক দুর্ঘটনা ডিভাইডারবিহীন রাস্তাগুলোতে হয়েছে। আমাদের চালকদের যে আচরণ তাতে কোনো রাস্তায় ডিভাইডার রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে সরকারকে এ উদ্যোগ নিতে হবে। মুখোমুখি সংঘর্ষগুলো এক্ষেত্রে অনেকটাই কমানো যাবে। সড়ক দুর্ঘটনার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো চালকরা এ ঈদের ৫ দিন কিংবা ১০ দিনে পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছে না।

অসচেতনতা কিংবা মালিকদের চাপে অতিরিক্ত সময়ে গাড়ি চালাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে চালকদের রোস্টারিং তালিকা প্রকাশ কিংবা সরকারের কাছে জমা দেওয়া জরুরি, যাতে করে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা মোটরর্সের চিপ অপারেটিং অফিসার মো. শাহ্দাত হোসেন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব মো. এম মনিরুল হক উপস্থিত ছিলেন।

সুত্র : জাগো নিউজ।

add-content

আরও খবর

পঠিত