নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনের চারবারের সংসদ সদস্য প্রয়াত সাংসদ গণমানুষের নেতা নাসিম ওসমানের স্মৃতিকে ধরে রাখতে বন্দরে নাসিম ওসমানের নামে একটি ভবন নির্মাণ ঘোষণা দিয়েছেন তাঁর ছোট ভাই বর্তমান সাংসদ এ.কে.এম সেলিম ওসমান।
সেলিম ওসমান বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে একজন মাত্র মানুষ ছিলো যিনি মঞ্জুরুল হক (বিকেএমই এর সাবেক সভাপতি) ও অ্যাডভোকেট বাবলু সহ কয়েকজন সাথে নববধূকে রেখে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য তিনি দেশ ত্যাগ করেছিলেন। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কে জাতীয় পার্টি আর কে আওয়ামীলীগ। আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ওসমান পরিবার। নারায়ণগঞ্জে এসে এই মাঠেই পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলে গিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে আছে শুধু ওসমান লীগ ও ওসমান পার্টি। আপনাদের চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই। আমার এবং রশিদ ভাইয়ের অনেক দিনের স্বপ্ন, এই বন্দরকে উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়ন করতে আমাদের একত্রিত থাকতে হবে। আমি যা বলি তা আমি করি। আমি যা পারিনা তা বলিনা। আজকে নাসিম ওসমানের মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি ঘোষণা দিতে চাই। বন্দরে আমার রশিদ ভাই, কাজিম উদ্দিন ভাই, সানাউল্লাহ সানু, দেলোয়ার প্রধান একটি জায়গা খুজে বের করেন। যেখানে নাসিম ওসমান ভবন নামে একটি ভবন নির্মাণ করা যেতে পারে। একই ভবনে একটি তলায় আওয়ামীলীগ এবং একটি তলায় জাতীয় পার্টির অফিস হবে। অন্য একটি তলায় একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরী করবো আমি আপনাদের সহোযোগীতা চাই।
তিনি আরও বলেন, আমি জাতীয় পার্টি অফিস ভেঙ্গে নাসিম ওসমান প্লাজা বানাবো না। বঙ্গবন্ধুর জন্য নাসিম ওসমান করেছেন। সুতরাং সেই ভবনটির ভেতরেই আওয়ামীলীগ এবং জাতীয় পার্টির অফিস হবে আমাদের মাঝে কোন ভেদাভেদ হবে না। নাসিম ওসমানের আমলেও হয়নি। আমার আমলেও হবেনা। এখন পর্যন্ত আমার তিনটি দলের মানুষ একত্রে বসেই বন্দরের উন্নয়নে যেকোন সমস্যা সমাধান করতে পেরেছি। নাসিম ওসমান সেতুটি চালু বন্দর আর নারায়ণগঞ্জের মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকবেনা। আমরা তিনতলা এই ভবনটি করে সারা বাংলাদেশের মানুষকে দেখিয়ে দিতে চাই আমরা একে অপরকে কতটা ভালোবাসি।
৩০শে এপ্রিল শনিবার পুরান বন্দর চৌধুরীবাড়ি এলাকায় অবস্থিত নাসিম ওসমান মডেল হাইস্কুল মাঠে প্রয়াস সাংসদ নাসিম ওসমানের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত দোয়া অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে এ দোয়ার আয়োজন করা হয়। একই সাথে শহরের মাসদাইর এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় কবরস্থান মসজিদে প্রয়াত নাসিম ওসমানের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মরহুমের আরেক ছোট ভাই নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।
দোয়া অনুষ্ঠানে প্রয়াত নাসিম ওসমান ছাড়াও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার, পল্লী বন্ধু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক মরহুম আবুল জাহের এর রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। সেই সাথে অসুস্থ রওশন এরশাদ এর সুস্থ্যতা কামনা করে দোয়া অনুষ্ঠিত।
সেলিম ওসমান বলেন, প্রথমবার বড় ভাই নাসিম ওসমানের মৃত্যুতে আমি আমার মায়ের নির্দেশে নির্বাচন করেছিলাম। দ্বিতীয়বার আমি আপার নির্দেশে আমি নির্বাচন করেছি। আগামীতেও আমি নির্বাচন করবো কি করবো এটা আমার মুরুব্বিরাই সিদ্ধান্ত দিবেন। আমি গর্বিত আমি কাজ করতে পেরেছি। এই স্কুলের জায়গাটি কেনার জন্য নাসিম ওসমান আমার কাছে গিয়ে ছিল। এখানে একটি ভাঙ্গা টিনের ঘর ছিল। আজকে এখানে আধুনিক ভবন হয়েছে, এখন থেকে সরাসরি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে আমরা এতোটুকু এগিয়ে যেতে পেরেছি। আমি ৭টি ইউনিয়নে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকা সহ মোট ৯টি স্কুল ভবন বানাতে পেরেছি। কদম রসুল কলেজকে সরকারী করণ করতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে পেরেছি এছাড়া সরকারী স্কুল গুলোতে উন্নয়ন করতে পেরেছি। নাসিম ওসমানের স্বপ্নের শীতলক্ষ্যা সেতু আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই চালু হবে, নবীগঞ্জ ঘাট দিয়ে ফেরী চলাচল করছে, বন্দর খেয়াঘাট দিয়ে মানুষ টোল ছাড়াই নদী পারাপার হতে পারছে, শান্তিরচরে নীটপল্লীর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে, লাঙ্গলবন্দের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্দরের চেহারা বদলে যাবে। নাসিম ওসমানের অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। আমি সৌভাগ্যবান যে আল্লাহ আমাকে দিয়ে এই কাজ গুলো করিয়েছেন আর এ জন্য আমি গর্ববোধ করি।
তিনি আরো বলেন, বন্দরকে নাসিম ওসমান অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আমার বাবা এবং দাদাও বন্দরকে ভালবাসতেন। আমি বলেছি আমার মৃত্যুর আমার লাশটা যেন বন্দরের দাফন করা হয়। এইটুকুই চাহিদা আপনাদের কাছে। আল্লাহ আমাকে দিয়ে যতটুকু করিয়েছেন আমি করতে পেরেছি। আমি আপনাদের সকলের সহযোগীতা চাই। অতীতে যত ভূল বুঝাবুঝি ছিল সব শেষ। আমরা শাসন করে নয় ভালবাসা দিয়ে সমস্যার সমাধান করবো। ৮ বছর ধরে আমি দায়িত্ব নিয়েছি। আগামী দেড় বছর আমার দায়িত্ব রয়েছে। আপনারা দোয়া করবেন আমি যেন সুস্থ থাকি।
দোয়া অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বন্দর উপজেলার চেয়ারম্যান ও থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম.এ রশিদ, সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধান, বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা, জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক সানা উল্লাহ সানু, মহানগর জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব আফজাল হোসেন, কলাগাছিয়া ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সভাপতি বাচ্চু মিয়া, ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা আজিজুল হক আজিজ, জেলা যুব সংহতির আহবায়ক রিপন ভাওয়াল, কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন প্রধান, ধামগড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন, জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহবায়ক মরহুম আবুল জাহের এর ছেলে জুনায়েদ সরকার রোহান সহ জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দরা।