স্বাগতম মাহে রমজান

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্টার ) : আহলান সাহলান স্বাগতম মাহে রমজান। বছর ঘুরে আবারো সুমহান, আর্দশ, শান্তি, সম্প্রীতি, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বার্তা নিয়ে মুসলমানদের দরবারে হাজির হলো সেই সংযমের মাস। আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম, আত্মনিয়ন্ত্রণ আত্মপোলব্ধি, আত্মত্যাগ, স্রষ্টা ও সৃষ্টির প্রতি দায়িত্ববোধের চেতনায় জীবনের কাক্সিক্ষত পরিবর্তনের জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ক্ষমা, দয়া-মায়া, বরকত আর করুণামোড়া চাদরে ডাকা বছরের সেরা উপহার মাহে রমজান। আহলান সাহলান মাহে রমজান। স্বাগতম মাহে রমজান।

বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত রাসুলে কারিম (সা.) এই মাসটিকে শাহরুন আজিম এবং শাহরুম মোবারক নামে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ মাসটি হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং মহান মাস, বরকতের মাস, মোবারক মাস।

মহান রবের পক্ষ থেকে ঘোষিত পুরস্কারের তুলনাহীন সে ক্ষণটি আমাদের সামনে স্বমহিমায় উপস্থিত। আঁধারঘন দীর্ঘ রাত মাড়িয়ে আলোকোজ্জ্বল পুণ্যেভরা ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান এর আগমনী বার্তায় মুখরিত আজ দশদিক । সিয়াম সাধনা, সাহরী, ইফতার, সালাতুত তারাবি, তাসবিহ-তাহলিল, কোরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা, জাকাত ও ওশর প্রদানসহ মহান মালিকের শোকর ও সন্তোষ অর্জনের অভিপ্রায়ে অন্যান্য ইবাদত ও হুকুম-আহকাম পালনে ঐশিবাণী কোরআন কারিম নাজিলের বর্ষপূর্তির এ সুমহান মাসটির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে প্রতিটি মোমিন প্রাণ। ইসলাম প্রকৃতপক্ষে সিয়ামের মতো ইবাদতটি প্রবর্তন করে অফুরন্ত পুণ্য ও অমূল্য ফলদানকারী এক চিরহরিৎ বৃক্ষরোপণ করেছে।

কোরআনে বর্ণিত একমাত্র মাস রমজান মাসের আজ প্রথম দিন। রমজানের রোজা মহৎ। রোজা অনিন্দ্য সুন্দর। রোজা আল্লাহর নিয়ামত। মহান মহিমায় মহিমান্বিত। শয়তান দমনের অস্ত্র। মহান মালিকের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে বিশেষ সেতুবন্ধন। যে মহান মালিক রোজার বর্ম পরিয়ে শয়তানের আশার আলো নিভিয়ে নস্যাত করেছেন, তার শয়তানি এবং বান্দার জন্য বেহেশতের দরজা উন্মোচন করেছেন।

রোজা নিছক উপবাস নয়। অন্যান্য ধর্ম ও সম্প্রদায়ে উপবাসের প্রচলন আছে। পুরাকালে কেল্ট রোমান, অ্যাসিরীয় ও ব্যাবিলনীয়দের মধ্যে রোজা প্রচলিত ছিল। ইহুদি, খ্রিষ্টান, জরথুস্ত্রও কনফুসিয়াস অনুসারী, বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মেও উপবাস পালিত হয়। সিয়াম পালন তথা রোজা মহান আল্লাহ তায়ালা নির্ধারিত ফরজ ইবাদাত। এটি ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ, যা মহান রব দ্বিতীয় হিজরি সনে ফরজ করেছেন। তিনি বলেন, হে ঈমানদাররা ! তোমাদের ওপর সিয়াম তথা রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সুরা বাকারা : ১৮৩)।

রমজান শব্দটি আরবি রামাদ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ পুড়িয়ে ফেলা, জ্বালিয়ে দেওয়া ও দহন করা। রমজানের সাধনার দহনে মোমিনের সব পাপ-পঙ্কিলতা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আত্মার কালিমা দূর হয়। মোমিনের হৃদয়মনে তাকওয়ার ঔজ্জ্বল্য স্থাপিত হয়, তাই মাসটির নাম রমজান।

আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং এ মাসটিকে কোরআন নাজিলের মাস বলে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, রমজান মাস যে মাসের মধ্যে বিশ্বমানবের জন্য সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য ও অসত্যের মধ্যে পার্থক্যকারী রূপে কোরআন নাজিল হয়েছে। তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন সিয়াম পালন করে। (সুরা বাকারা : ১৮৫)।

পবিত্র এ রমজানে মুমিন মুত্তাকিদের আধ্যাত্মিক-বাগানে ঘটবে নব-বসন্তের সমারোহ। জান্নাতি আনন্দে মুমিন মুত্তাকির হৃদয়গুলো আলোকিত হয়ে উঠবে। আল্লাহ পাকের পবিত্র বান্দারা জানে, রমজানের রহমতের প্রথম দশকে রহমতের বৃষ্টির পানি দ্বারা তাদেরকে সিক্ত করবেন এবং তাদের তৃষ্ণা মেটাবেন। এ কারণেই আল্লাহ পাকের নেক বান্দারা তার রহমত থেকে কখনো নিরাশ হোন না এবং সামান্য অজুহাত দেখিয়ে রোজা ছেড়ে দেন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মাহে রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, হে যারা ঈমান এনেছো ! তোমাদের জন্য সেভাবে রোজা রাখা বিধিবদ্ধ করা হলো, যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্য বিধিবদ্ধ করা হয়েছিল, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

এ আয়াত থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট হয় তাহলো- ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসাবে রোজা অর্থাৎ উপবাসব্রত পালন করা কোনো না কোনো আকারে সব ধর্মেই ছিল, আছে। অধিকাংশ ধর্মগুলোতে এবং নিম্ন, মধ্য ও উচ্চ শ্রেণীর কৃষ্টির মধ্যে, উপবাসব্রত একটি সাধারণভাবে নির্দেশিত ব্যাপার। আর যেখানে এই ধরণের নির্দেশ নেই, সেখানেও প্রাকৃতিক প্রয়োজনের তাগিদে অনেকেই উপবাস করে থাকেন।

জ্ঞানীগণের অভিজ্ঞতা থেকে যে বিষয়টি জানা যায় তা হলো, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও মনের পবিত্রতা সাধনের জন্য শারীরিক সম্পর্কসমূহ কিছুটা ছিন্ন করা এবং সাংসারিক বন্ধন থেকে কিছুটা মুক্তিলাভ করা একান্তই প্রয়োজন। তবে ইসলাম এই উপবাসব্রতের মধ্যে নবরূপ, নব অর্থ ও নবতম আধ্যাত্মিক তাৎপর্য আরোপ করেছে।

পবিত্র মাহে রমজানের এই রোজাকে অর্থাৎ উপবাস পালনকে ইসলাম পূর্ণমাত্রার আত্মোৎসর্গ মনে করে থাকে। যিনি রোজা পালন করেন, তিনি যে কেবল শরীর রক্ষাকারী খাদ্য পানীয় থেকেই বিরত থাকেন; তা নয় বরং তিনি সন্তানাদি জন্মদান তথা বংশবৃদ্ধির ক্রিয়াকলাপ থেকেও দূরে থাকেন এবং সব পাপ কাজ থেকেও বিরক থাকেন।

তাই যিনি রোজা রাখেন, তিনি তার অসাধারণ আত্মত্যাগের এবং তার প্রস্তুতির কথা আল্লাহ পাককে জানিয়ে দেন আর তার হৃদয় এই ঘোষণাও দেয় যে, আমি কেবলমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা রাখছি।

আমাদের এ পবিত্র রমজান মাসের পুরো ফায়দা অর্জন করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত হবে, পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব বুঝে রমজান থেকে কল্যাণ অর্জন করা। হাদিসে পাকে এসেছে- নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে এবং এমনিভাবে রাতে ইবাদত করে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি)

রোজাদারের মর্যাদা ও সম্মান কত বেশি, তা নবিজীর এ হাদিসে সুস্পষ্টভাবে উঠে এসেছে- জান্নাতে রাইয়ান নামক একটা দরজা আছে। এই দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন শুধু রোজাদাররাই প্রবেশ করবে। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তারা ছাড়া আর কেউ এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি)

আমাদের সবার উচিত হবে, রমজানের কল্যাণ থেকে পুরোপুরি ফায়দা হাসিল করা, রমজানের কল্যাণসমূহ দ্বারা নিজেদের সুশোভিত করা। যেন এ রমজানে কোরআন তেলাওয়াতের গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠে আমাদের চারপাশ। যেন কোরআনের আলোয় আলোকিত হয় সমগ্র বিশ্ব।

মহান আল্লাহ পাকের দরবারে এই মিনতি, হে আল্লাহ ! তুমি আমাদের ক্ষমা কর আর পবিত্র এই রমজানে তোমার রহমত, মাগফেরাত আর নাজাত পেয়ে ধন্য হই। আমিন।

add-content

আরও খবর

পঠিত