নারায়ণগঞ্জে মা-মেয়ে হত্যার মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ : নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে ডালপট্টি এলাকার একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট বাসায় ঢৃুকে মা ও ৭ মাসের অন্ত:সত্ত্বা মেয়েকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব থানা পুলিশ থেকে জেলা গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ৩ই মার্চ বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের নির্দেশ দেন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমির খসরু বলেন, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আর কোনও কারণ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জুবায়ের সপ্নীল (২৬) ছাড়া অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তাও দেখছে পুলিশ। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। রিমান্ড শেষে বলা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনার প্রথম দিনে জঙ্গি সম্পৃক্ততা সন্দেহে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। তবে এ বিষয়ে তারা কিছু পায়নি।

এ ঘটনায় ২রা মার্চ বুধবার পুলিশ বলেছিল, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জুবায়ের হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। টাকা-পয়সার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলেও জানিয়েছেন।

মামলা ডিবিতে হস্তান্তরের তথ্য নিশ্চিত করে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, ঋণগ্রস্ত হওয়ার পর হতাশ যুবক টাকা জোগাড়ের উদ্দেশ্যে ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাকে রিমান্ডে আরো ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার ল্যাপটপ, ফেসবুক আইডিসহ ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক ডিভাইসগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এর আগে ১লা মার্চ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জে ডালপট্টি এলাকায় স্বপন দাসের মালিকানাধীন মাতৃ সদন নামে একটি ৬ তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন : রুমা চক্রবর্তী (৪৬) ও তার মেয়ে ৭ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ঋতু চক্রবর্তী (২২)। নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তী স্থানীয় একটি পাইকারি আড়তে ম্যানেজারের চাকরি করেন। তাদের মেয়ে ঋতুর স্বামীর নাম শ্যামল ভট্টাচার্য। তিনি চাকরি সূত্রে চট্টগ্রামে থাকেন। অন্ত:সত্ত্বা হওয়ায় কিছু দিন ধরে মায়ের সঙ্গে ছিলেন ঋতু।

ফ্ল্যাট বাসায় মা ও মেয়ের খুনের ঘটনায় দুইজনের মধ্যে একজনের মরদেহ মেঝেতে ও অপরজনের মরদেহ অর্ধেক খাটের উপর ছিল। পুরো ফ্লোর ছিল রক্তমাখা। ওই ঘটনায় রক্তমাখা ছুরিসহ জুবায়ের নামে এক যুবককে এলাকাবাসীর সহায়তায় আটক করে পুলিশ। ওই যুবক শহরের পাইকপাড়া এলাকার লবণ ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন।

এদিকে, পুলিশে খবর দেওয়া হলে স্থানীয় ৪ যুবক ও পুলিশ ওই ভবনের ছয় তলায় উঠলে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করা অবস্থায় দেখতে পান। এরপর দরজা ভেঙে প্রবেশ করলে সেখানে মা ও মেয়ের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর ফ্ল্যাটের ড্রইং রুমের দরজা ভেঙে জুবায়ের নামে ওই যুবককে হাতে গ্লাভস পরিহিত অবস্থায় রক্তাক্ত ছুরিসহ আটক করে পুলিশ।

এ বিষয়ে নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তী জানান, আমি এখানেই একটি দোকানে কাজ করি।আমার সঙ্গে কারও শত্রুতা নেই বা ছিলও না। কেন এ হত্যার ঘটনা সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি খবর পেয়ে এসে দেখি সব শেষ। আমার বাড়ির নিচে ও ফ্ল্যাটে পুলিশ। আমি এই হত্যার বিচার চাই।

তিনি আরও জানান, আমার মেয়ে ৭ মাসের অন্ত:সত্ত্বা। যে এখনো পৃথিবীর আলো দেখেনি তার কি দোষ ছিল। এটা তো দুইজনকে হত্যা নয় একসাথে তিনটি জীবন কেড়ে নিয়েছে ঘাতক। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে কয়েক মাস আগে থেকেই আলাদা থাকে। আমার মেয়ে অন্ত:সত্ত্বা থাকায় সে আমার বাড়িতে এসেছিল।

২রা মার্চ বুধবার দুপুরে নিহত রুমা চক্রবর্তীর স্বামী রাম প্রসাদ চক্রবর্তী বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার এজাহারে আল জুবায়েরকে একমাত্র আসামী করা হয়েছে। একই দিন আদালতে আসামীর ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

এই হত্যাকাণ্ডের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাম প্রসাদের পুত্রবধূ শিলা মামলার এজাহারের এক অংশে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন তাদের ফ্ল্যাটে ঢুকে এক যুবক (জুবায়ের) রুমা ও ঋতুকে ছুরি দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়েছে। শিলাকে হত্যার জন্য রান্না ঘরে বটি হাতে নেন হামলাকারী। তবে কৌশলে সেই বটি ছিনিয়ে নিয়ে ফ্ল্যাট থেকে বের হয়ে নিচে নামেন। হামলাকারী ওই যুবক তাকে ধাওয়া করে নিচে নামেন, তবে ততক্ষণে ভবনের অন্য লোকজন টের পেয়ে বাইরে থেকে ফটক আটকে দেয়। ওই যুবক ফের ছয় তলার ফ্ল্যাটে ফিরে যান। পরে পুলিশ তাকে আটক করে এবং লাশ উদ্ধার করে।

add-content

আরও খবর

পঠিত