সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ঢাকা ডেস্ক ) : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২০তম জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার। এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার। সম্মেলনকে ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।

দলীয় সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ৬ হাজার ৫শ’ ৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নেবেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন ২৩ অক্টোবর রোববার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হবে। সর্বশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে। এসময় কমিটি নির্বাচনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে এ নির্বাচন কমিশন। তিন সদস্যের এ কমিশনের সদস্যারা হলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান এবং সাবেক সচিব রশিদুল আলম।

উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়াও দেশের কুটনীতিক, রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী এবং সাংবাদিকরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন।

অন্যদিকে ১২টি দেশের ৫৫জন অতিথি এই সমম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন বলে আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে। ইতোমধ্য সারাদেশ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা এসেছে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে। ডেলিগেট কার্ড, পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, স্বেচ্ছাসেবক ইউনিফর্মসহ সম্মেলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপকরণ তৈরির কাজও শেষ। সম্মেলনের ঘোষণাপত্রও প্রস্তুত হয়েছে।

সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা শহরগুলো সাজানো হয়েছে। শুধু দেশেরই নয়, প্রবাসী বাঙালীদেরও দৃষ্টি এখন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিকে। আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে দলটি কেমন নেতৃত্ব আনছে, ঘোষণাপত্রে কী ঘোষণা থাকছে, সেটি দেখার অপেক্ষায় এখন দেশের ১৬ কোটি মানুষ। অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনকে নির্বিঘেœ করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের প্রশক্ষণপ্রাপ্ত দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জানিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন ।সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। তারা সম্মেলনস্থল, ৭টি প্রবেশপথসহ আশেপাশের এলাকায় ৫০টি ইউনিটে ভাগ হয়ে কাজ করবেন। প্রত্যেক ইউনিটে একজন টিম লিডার থাকবেন, তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে দেখা গেছে, সম্মেলন স্থলে চোখ ধাঁধাঁনো আলোকসজ্জার ব্যবস্থাসহ নানা রঙের ব্যানার ফেস্টুন ও পোস্টারসহ অপরূপ সাজে সাজানো হয়েছে উদ্দ্যানটি। নৌকার আঙ্গিকে তৈরি করা হয়েছে সম্মেলনের মূল মঞ্চ। এর আগে সম্মেলন উপলক্ষে রাজধানীসহ বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের ওপরে তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এসব তোরণগুলোতে বিএনপি-জামায়াতের আগুনসন্ত্রাসের বিভিন্ন আলোক চিত্র সাঁটানো হয়েছে। তাছাড়া জঙ্গিবাদের পক্ষ অবলম্বন করে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া বক্তব্য সন্নিবেশিত থাকবে লিফলেট, ব্যানার ও পোস্টারে।

সাজ-সজ্জা উপ কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন হবে সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ। এর মাধ্যমে সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং গৌরব বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা হবে। ঢাকা শহরসহ সারা দেশে আলোকসজ্জা শেষ হয়েছে। সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে এসব সাজ-সজ্জায়।
সম্মেলন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অতিথিদের হাতে দেওয়া হবে বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের ভিডিও সিডি। সেখানে জঙ্গিবাদের পক্ষে দেওয়া তাদের বক্তব্য তুলে ধরা হবে।

ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে : রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাজসজ্জার সাথে সাথে ফেসবুকের প্রোফাইল ছবিতেও আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের ছাপ পড়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এর নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন সামস বলেন, ২০তম জাতীয় কাউন্সিল আওয়ামী লীগের নিজস্ব ফেসবুক পেজে থেকে সরাসরি ফেসবুকে লাইভ প্রচার করা হবে। ২২ ও ২৩ অক্টোবরের সম্মেলনে ৫০ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট বসার ব্যবস্থা থাকবে। তাদের সুবিধার্থে ১০টি বড় পর্দায় সম্মেলন দেখানো হবে।

এছাড়াও ১২ দেশের ৫৫জন অতিথি আসছেন : চীন, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ভারত, কানাডা, অস্টোলিয়া, ইতালি, শ্রীলংকাসহ ১২টি দেশের ৫৫ জন বিদেশি অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। তবে এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

দুইদিন ব্যাপী এ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতা, কাউন্সিলর, প্রতিনিধি, দেশী-বিদেশী অতিথি ও শুভানুধ্যায়ী মিলে ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষের আগমন আশা করা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭টি প্রবেশপথ করা হয়েছে। এছাড়া থাকছে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
১৫০/৮৪ ফুট সুবিশাল মঞ্চ তৈরি : সম্মেলনকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূল মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে। লম্বায় ১৫০ ফুট, চওড়ায় ৮৪ ফুট। মঞ্চের ছাদের উচ্চতা ৪২ ফুট। নির্মাণকাজে যুক্ত কর্মীরা জানান, মূল মঞ্চ হয়েছে পাঁচ স্তরের। একেবারে সামনের অংশটির উচ্চতা হবে আড়াই ফুট। যেখানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা হবে। সাত ফুট উচ্চতার স্থানটিতে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বসবেন। আর পেছনের বিভিন্ন উচ্চতার তিন সারিতে কেন্দ্রীয় নেতাসহ ৫৮ জনের বসার স্থান করা হয়েছে।

মঞ্চের সামনে বিশাল প্যান্ডেল প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। এর ভেতরে ২০ হাজার চেয়ার রাখা হয়েছে। রয়েছে ১৬টি এলইডি টেলিভিশন। গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে শতাধিক কারিগর মঞ্চ তৈরির কাজ করেছেন। চারুকলার প্রায় দেড় ডজন ছাত্র সুদৃশ্য এই মঞ্চ নির্মাণে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বৃহস্পতিবার রাতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে মঞ্চটি বুঝিয়ে দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৬৭ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ১৯টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সূত্র : বাসস।

add-content

Leave a Reply

Your email address will not be published.

আরও খবর

পঠিত