বিনম্র শ্রদ্ধা তোমাদের . . .

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪: মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির দিনটিতে ভাষার জন্য জীবন দেয় রফিক, সালাম, বরকত ও নাম না জানা আরও অনেকে। ভাষার জন্য আত্নত্যাগ এটা ছিলো ইতিহাসের একটি নজিরবিহীন ঘটনা। । যা না হলে আমরা স্বাধীন ভাবে মায়ের ভাষায় কথা বলতেই পারতাম না । সেই সব শহিদ দের প্রতি রইলো লাখো কোটি সালাম ও বিনম্র শ্রদ্ধা ।

রফিকউদ্দিন আহমদ
বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ এর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল।

শফিউর রহমান
শফিউর রহমান (জন্মঃ জানুয়ারি ২৪, ১৯১৮ – মৃত্যু : ফেব্রুয়ারি ২২, ১৯৫২) মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ। তাঁর শহীদস্মৃতি পরবর্তীকালে বাঙালি জাতিকে জাতীয় চেতনা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। এ চেতনার বলেই ১৯৭১ সালের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে নিহত ভাষা শহীদের স্মরণে জন সমাবেশ, গণমিছিল ও বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল ঐ জনসমাবেশে শফিউর রহমান ছিলেন। বিক্ষোভরত জনতার উপর পুলিশ বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করতে থাকলে এক পর্যায়ে শফিউর রহমান খোশমহল রেষ্টুরেন্টের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতরভাবে আহত হন।ওখান থেকে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। তাঁর অস্ত্রোপচার সফল হয়নি প্রচুর রক্তক্ষরণ হয় ফলে ঐ দিন সন্ধ্যা সাতটায় হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আবদুস সালাম
আবদুস সালাম (জন্মঃ ১৯২৫ সালে ফেনীর দাগনভূঁইয়াা উপজেলার লক্ষণপুর গ্রামে (পরবর্তীতে তার নামানুসারে গ্রামের নামকরণ করা হয় সালামনগর); মৃত্যু : এপ্রিল ৭, ১৯৫২ সালে) মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ। ভাষা রক্ষায় তাঁর অসামান্য ভূমিকা ও আত্মাহুতির কারণেই পরবর্তীকালে বাঙালি জাতিকে জাতীয় চেতনায় উজ্জ্বীবিত ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। এ চেতনার ফলেই ১৯৭১ সালের সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। তাঁর পিতার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া। আবদুস সালাম কর্মজীবনে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার নীলক্ষেত ব্যারাকের ৩৬বি নং কোয়ার্টারে বাস করতেন।

আবদুল জব্বার
আবদুল জব্বারের পুত্র জন্ম হওয়ার কিছুকাল পরে তার শাশুড়ি ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। শাশুড়িকে নিয়ে ১৯৫২ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮) উঠেন। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে, কি হয়েছে দেখবার জন্য তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসেন। তখনই পুলিশ গুলি শুরু করে এবং জব্বার আহত হন। ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা জব্বারকে মৃত ঘোষণা করেন। তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের মধ্যে ছিলেন ২০/৯ নম্বর কক্ষের সিরাজুল হক।

আবুল বরকত
ভাষা শহীদ আবুল বরকত ১৬ই জুন ১৯২৭ সালে ভারতের পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার বাবলা নামক একটি ছোট গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতার নাম শামসুউদ্দিন। ১৯৫২ সাল ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের সামনে আমতলায় সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মী পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সমাবেশে যোগদান করেন। ঢাকাসহ সারাদেশে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” এই দাবীতে তখন আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ছাত্রজনতার শ্লোাগানে শ্লোাগানে কেঁপে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। পুলিশের সঙ্গে ছাত্র জনতার সংঘর্ষ শুরু হয় বিক্ষিপ্তভাবে। বাঙালি জনতার চোখে সেদিন ছিল ভয়ের পরিবর্তে ঘৃনার আগুন । পুলিশ চেষ্টা করছিল ছাত্রদের ব্যারিকেড ভেঙ্গে হোস্টেল চত্বরে ঢুকতে। কিন্তু, ছাত্রদের শক্ত প্রতিরোধের কারনে তারা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছিল । বেলা ৩টার দিকে হোস্টেল চত্বরে ঢুকে নির্মমভাবে গুলি চালাতে থাকে পুলিশ। সেই সময় আবুল বরকত অন্য এক বন্ধুর দিকে এগিয়ে এসেছিলেন। হঠাৎ তিনি বুলেটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।আব্দুল বরকত।১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী রাত ৮টার সময় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী ওয়ার্ডে মহান এই দেশ প্রেমিক শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।

add-content

আরও খবর

পঠিত