ছুটির দিনে দর্শনার্থী সমাগমে প্রাণ পেল বাণিজ্য মেলা

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( ডেস্ক রিপোর্ট ) : ছুটির দিনে দর্শনার্থীদের পদচারণায় জমে উঠেছে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ১১ জানুয়ারি শুক্রবার হওয়ায় মেলা প্রাঙ্গণজুড়ে সময়ের সঙ্গে বেড়ে চলেছে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উচ্ছল উপস্থিতি। বিক্রেতারাও উৎফুল্লচিত্তে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন তাদের স্টলে, বিভিন্ন অফারে। মেলা শুরুর পর শুক্রবারই যেন দর্শনার্থীর আগমনে  প্রাণ পেয়েছে বাণিজ্য মেলা।

ছুটির দিন শুক্রবার রাজধানীবাসীর হাতে কাজ না থাকায় সবাই মেতে উঠেন বিনোদনে। রাজধানীতে বাণিজ্য মেলা শুরু হওয়ার কারণে অনেকেই ছুটেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। ফলে সব শ্রেণীর মানুষের সমাগমে জমে উঠছে বাণিজ্য মেলা। তবে এখনও অনেক স্টল প্যাভিলিয়নে কাজ করতেও দেখা গেছে। মেলা শুরুর পর শুক্রবারই যেন দর্শনার্থীর আগমনে প্রাণ ফিরে পেল এবারের মেলা।

জানুয়ারি মাসের শুরুতেই মেলা শুরুর কথা থাকলেও এবার নির্বাচনের কারণে কিছু দিন পিছিয়ে যায়। গত ৯ জানুয়ারি মেলা শুরুর পর দ্বিতীয় দিনও খুব একটা সাড়া দেননি দর্শনার্থীরা। সবাই ছুটির দিনকেই বেছে নিলেন। আর প্রথম শুক্রবারই মেলায় মানুষের কিছুটা সমাগম দেখা গেল। তবে এখনও তেমন একটা ভিড় শুরু হয়নি। বিশেষ করে -ধাক্কাধাক্কির- ভিড় একেবারেই নেই মেলায়। তবে দর্শনার্থীদের আগমনে বেশ খুশি ব্যবসায়ীরা। আর মেলায় এসে পরিবার স্বজনদের সময় দিতে পেরে দর্শনার্থীরাও উচ্ছ্বসিত।

শুক্রবার বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায় এখনও প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়নি স্টলগুলোতে। তবুও দর্শনার্থীদের অভাব নেই। সকাল থেকে দর্শনার্থীদের তেমন উপস্থিতি না থাকলেও জুমার নামাজের পর থেকে আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। সন্ধ্যার পর বেশ ভিড় দেখা যায় মেলাস্থলে। সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের স্টল, প্যাভিলিয়নও পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। কারুপণ্যের স্টল বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের স্টল নির্মাণের কাজ চলছিল। কর্মরতরা জানান, পুরো কাজ শেষ করতে কিছু সময় লাগবে। ছোট আকারের স্টলগুলোর বড় একটা অংশেরই নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। যা দুই একের মধ্যেই শেষ হবে বলেও জানা গেছে।

মেলার বিভিন্ন স্টলের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেনাকাটার চেয়ে মানুষ ঘুরে দেখছেন বেশি। তবে খাবারের দোকানগুলোতে বেশ বিক্রি করতে দেখা গেছে। ইমরান হোসেন পরিবার নিয়ে মেলা এসেছেন তবে বাচ্চার জুতা ছাড়া কিছুই কেনেননি। তিনি বলেন, কেবল মেলা শুরু হলো। ছুটির দিনতো সামনেও পাব। ছুটির দিন একটু ঘুরতে আসলাম।

কেনাকাটার ভিড় তেমন না থাকলেও আগত দর্শনার্থীদের সেলফি উৎসব দেখা গেছে। যারাই মেলায় এসেছেন বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম সবাই মুঠোফোনে সেলফি নিতে দেখা গেছে।

শাহরিয়ার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিটি মেলা এই একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য থাকে। আমি প্রতি বছরই মেলায় আসি। কয়েকবার করে আসি। স্মৃতি হিসেবে বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি তো থাকতেই হয়। বাণিজ্য মেলায় সেলফি নেয়ার মতো দৃশ্যও আছে অনেক। বিশেষ করে মূল ফটক তৈরি করা হয়েছে মেট্রো রেলের আদলে। এছাড়াও মেলার ভেতরে অনেক ফুলের বাগান রয়েছে। কেউ কেউ বড় বড় প্যাভিলিয়নের সামনেও সেলফি নিচ্ছেন।

বিভিন্ন অলঙ্কার, জামা কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের কিছুটা কেনাকাটা থাকলেও ফার্নিচার, ইলেক্ট্রনিক্স দোকানগুলোতে কেবলই ঘোরাঘুরি করেছেন দর্শকরা।

ফার্নিচার বিক্রেতা জুলহাস বলেন, আমাদের পণ্য সাজানো হয়েছে। অনেকেই দেখছেন আর দাম জানতে চাইছেন। হয়ত সামনের দিনগুলোতে কিনবেন।

ইলেক্ট্রনিক্স ও হোম এ্যাপ্লায়েন্সের বিভিন্ন প্যাভিলিয়নে দেখা যায়, ফ্রিজ, এসি, এলইডি টেলিভিশনসহ অন্যান্য হোম ও কিচেন এ্যাপ্ল্যায়েন্সেস প্রর্দশন করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি মডেলের রাইস কুকার, কিচেন কুকওয়্যার, আয়রন, অটো ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার, ব্লেন্ডার, ফ্যান, ওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, হেয়ার ড্রায়ার, এয়ার কুলার, ওয়াশিং মেশিন, রিচার্জেবল ও পোর্টেবল ল্যাম্প, জুসার, মাল্টি কুকার, টোস্টার, গ্যাস স্টোভ ও ওয়াটার ডিসপেন্সারসহ নানা পণ্য।

শাহজাহানপুরের বাসিন্দা নিতু আক্তার বলেন, বাণিজ্য মেলায় শুরুর দিকে ভিড় কম থাকে। ছুটির দিন ছাড়া খুব একটা বের হওয়া যায় না। তবে কেনাকাটা শেষের দিকেই করব। তখন ছাড় থাকে অনেক। এখন দাম বেশি।

দেশীয় বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জামা-কাপড়সহ রান্না করার জিনিসপত্রের স্টলে দর্শনার্থীদের বেশ ভিড় দেখা গেছে। গেট ইজারাদার জানিয়েছেন দর্শনার্থী আসছেন তবে ছুটির দিন হিসেবে খুব একটা নয়। সামনের দিনের দিকে তাকিয়ে আছি। ছুটির দিনে কেমন টিকেট বিক্রি হলো জানতে চাইলে গেট ইজারাদার মীর ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত প্রায় বিশ হাজারের মতো টিকেট বিক্রি হয়েছে। যা ছুটির দিন হিসেবে খুব কমই বলতে হয়।

তিনি আরও বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে দিন মেলা উদ্বোধন করলেন সে দিন টিকেট বিক্রি নেই বললেই চলে। কেননা রাষ্ট্রপতি আমাদের মেলাস্থল ঘুরে দেখেছেন। আর দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার ১০ হাজার টিকেট বিক্রি করেছি। ভেবেছিলাম শুক্রবার অনেক মানুষ হবে। সামনের ছুটির দিনে হবে আশা করছি।

এদিকে, মেলায় লোক সমাগম বাড়ায় আশপাশের রাস্তায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ওপর স্বাভাবিক চাপও বৃদ্ধি পেয়ে কিছুটা যানযটও দেখা গেছে।

এ বছর মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে রয়েছে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান।

প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত ১০টা পর্যন্ত। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৩০ টাকা ও অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো এবার অনলাইনে মেলার টিকিট পাওয়া যাচ্ছে।

add-content

আরও খবর

পঠিত