আজ পহেলা বৈশাখ, স্বাগত বাংলা নববর্ষ ১৪২৬

নারায়ণগঞ্জ বার্তা ২৪ ( রাব্বী সরকার ) : আজ বাংলা ১৪২৬ সনের প্রথম দিন। বাঙ্গালির বর্ষবরণ নানা আয়োজন বাজবে ঢোল আর ঢাক। প্রকৃতির খেলায় নাগর দোলায়, ঘুরে এলো পহেলা বৈশাখ। আজ বর্ষবরণের প্রথম দিনে, বাঙ্গালির নববর্ষ উৎসবের ক্ষণে করিবে নৃত্য, কবিতা আবৃত্তি, ভুলে জ্বরা-কান্তি বাঙ্গালি সংস্কৃতি, বাঙ্গালির কৃষ্টি করতে চাই সৃষ্টি, শ্রদ্ধার সাথে হৃদয়ে গাঁথা থাক। ঐ দারিদ্র্যের নিস্পেষণে জর্জরিত, আনন্দ থেকে কেউ নয় বঞ্চিত।

মেয়েদের লাল পেড়ে শাড়ি, কানে দুল, কিশোরীর খোপায় পরে গাঁদা ফুল। ছেলেরা গায়ে পড়ে লাল-সাদা রঙের বিভিন্ন পাঞ্জাবী আর পায়জামা ও ফতুয়া। আনন্দ উল্লাসে বৈশাখী মেলা, ভাসিয়ে সুখের ভেলা, মাটির পুতুল, কানের দুল, পাটের ছিকা, তাল পাতার পাখা, বাঁশের বাঁশি সোলার পাখি, শামুকের মালা গেঁথে রাখ। ঐ শহরে শহরের মুক্তাঙ্গনে, কবিতা পাঠ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাচবে গাইবে প্রাণ খুলে। ডিম ভাজি আর পান্তা ভাত, নববর্ষের রেওয়াজ হয়ে থাক। বাঙ্গালির বর্ষবরণ নানা আয়োজন, বাজবে ঢোল আর ঢাক, প্রকৃতির খেলায় নাগর দোলায়, ঘুরে এলো পহেলা বৈশাখ।বাংলা নববর্ষ

বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙ্গালিরাও এই উৎসব অংশ নিয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি একটি বাঙ্গালির সর্বজনীন লোক উৎসব। অতীতের ভুলক্রটি ও ব্যথতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদযাপিত হয় বাংলা নববর্ষ। এদিন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে সরকারী ও বেসরকারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা দিনটি নতুন ভাবে ব্যবসা শুরু করার উপলক্ষ হিসেবে বরণ করে নিবে। এক সময়  নববর্ষ পালিত হতো আর্তব উৎসব বা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে। তখন এর ঘনিষ্ঠ সর্ম্পক ছিল কৃষির, কারণ কৃষিকাজ ছিল ঋতুনির্ভর। এই কৃষিকাজের সুবিধার্থেই মুগল সম্রাট আকবর ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১০/১১ মার্চ বাংলা সন প্রবর্তন করেন এবং তা কার্যকর হয় তার সিংহাসন-আরোহণের সময় থেকে ৫ নভেম্বর ১৫৫৬ সালে হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসনকে ভিত্তি করে বাংলা সন প্রবর্তিত হয়।বাংলা নববর্ষ

নতুন সনটি প্রথমে (ফসলি সন) নামে পরিচিত ছিল, পরে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত হয়। বাংলা নববর্ষ পালনের সূচনা হয় মূলত আকবরের সময় থেকেই সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্র মাসের শেষ দিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীর খাজনা পরিশোধ করত। পরদিন নববর্ষে ভূ-স্বামীরা তাদের মিষ্টিমুখ করাতেন। এ উপলক্ষে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে পহেলা বৈশাখ আনন্দময় ও উৎসবমুখী হয়ে উঠে এবং বাংলা নববর্ষ শুভ দিন হিসেবে পালিত হয়। অতীতে বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। এটি পুরোপুরিই একটি অর্থনৈতিক ব্যাপার। গ্রাম-গঞ্জে নগরে ব্যবসায়ীরা নববর্ষের প্রারম্ভে তাদের পুরাতন হিসাব-নিকাশ সম্পন্ন করে হিসাবের নতুন খাতা খুলতেন। এ উপলক্ষে তারা নতুন-পুরাতন খদ্দেরদের আমন্ত্রণ জানিয়ে মিষ্টি বিতরণ করতেন এবং নতুনভাবে তাদের সঙ্গে ব্যবসায়িক যোগসূত্র স্থাপন করতেন। চিরাচিত এ অনুষ্ঠানটি আজ পালিত হচ্ছে। নতুন বছরের উৎসবের সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি সংস্কৃতিক নিবিড় যোগাযোগ। গ্রামে মানুষ ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, নতুন জামা-কাপড় পড়ে এবং আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে বেড়াতে যায়। এদিনে বাড়িতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থাও থাকে।

কয়েকটি গ্রামের মিলিত হয়ে, কোন খোলা মাঠে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। মেলাতে থাকে নানা রকম কুঠির শিল্পজাত সামগ্রীর বিপণন, থাকে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন। অনেক স্থানে ইলিশ মাছ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এই দিনের একটি পুরনো সংস্কৃতি হলো গ্রামীণ ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন। এর মধ্যে থাকে নৌকাবাইচ, লাঠি খেলা কিংবা কুস্তির।বাংলা নববর্ষ

বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে ও পালিত হবে।

add-content

আরও খবর

পঠিত